নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও। অথবা, একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও। উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা: পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের নীচের দিকে ক্ষয়কাজ বেশি করে বলে নদী-খাত প্রথমে '।'
বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তার প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে – কাজেই "বিদ্রোহী কবি"
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম চুরুলিয়াতে একটি দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। ছোটো থেকে অনেক কষ্ট, দুঃখ আর দুর্দশার সাথে লড়াই করতে করতে তিনি দেখেন জীবনের আসল রূপ । কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি,নাট্যকার,সংগীতজ্ঞ,দার্শনিক,সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক, যিনি বাংলা কাব্যে প্রগতিশীল নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। এপার বাংলা ও ওপার বাংলা, দুই বাংলাতেই তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন, যা আজও তাকে প্রতিটি মানুষের মনের মণিকোঠায় জায়গা করে দিয়েছে । তিনি মানুষ কে বহু কিছু শিখিয়ে গেছেন। মানুষে মানুষে সম্প্রীতি, মানুষের উপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার, অবিচার এবং শোষণের বিরুদ্ধে কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদা লিখে গেছেন, মানুষ কে সচেতন করার চেষ্টা করে গেছেন। তাঁর কলম সকল অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর তুলেছে। তিনি তার বিদ্রোহী মনোভাব তুলে ধরেছেন তার লেখনীতে, যেগুলো পড়লে রক্ত গরম হয়ে ওঠে । ধর্ম, সমাজ, মানুষ, প্রেম, ভালবাসা, নারী, বিদ্রোহ, সহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক এবং উপমহাদেশিক বিষয় নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি গুলো আজ আমরা তুলে ধরবো।
ভালোবাসা নিয়ে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের উক্তি।
প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে বিশ্বজুড়ে শত শত কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, এমনকি বিজ্ঞানীরাও শত শত উক্তি করে গিয়েছেন। প্রেম চিরন্তন ও সত্য, ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ এক একজন ব্যক্তি বা কবির আলাদা আলাদা হলেও সবার মূল বিষয়টা কিন্তু একই থাকে, তা হচ্ছে মন। কাজী নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি বলা হলেও, প্রেম ও ভালবাসা নিয়ে কবির কবিতা, বানীতে কোনো কমতি ছিল না। তিনি প্রেম ও ভালবাসার এক অসাধারণ কবি ছিলেন। প্রেম, ভালবাসা নিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কয়েক টি উক্তি নীচে তুলে ধরা হলো।
“ভালোবাসা দিয়ে ভালোবাসা না পেলে তার জীবন দুঃখের ও জরতার।”
“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন,
সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।”
“আমার যাবার সময় হল- দাও বিদায়, মোছ আঁখি দুয়ার খোল -দাও বিদায়। ”
“ভালোবাসা যে জীবনে অপমান করে সে জীবনে আর ভালোবাসা পায় না।”
"সে দেশে যবে বাদল ঝরে কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে,
বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে"
“কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পুর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।”
“মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল
ভরি ডালি দিনূ ঢালি দেবতা মোর ।
হায় নিলে না সে ফুল ছি ছি বেভুল
নিলে তুলি খোপা খুলি কুসুম ডোর”
“এই অসুন্দরের শ্রদ্ধা নিবেদনের
শ্রাদ্ধ দিনে বন্ধু, তুমি যেন যেওনা”
“আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
আসবে শিশির-রাত্রি!
থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
বঁধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে-
বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে! ”
“আমার বুকের যে কাটা ঘা, তোমায় ব্যাথা হানত সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত আসব তখন পান্থ, হয়তো তখন আমার কোলে সোহাগ লোভে পড়বে ঢোলে আপনি সেদিন সেধে-কেদে চাপবে বুকে বাহুয় বেধে চরন চুমে পূজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।”
“আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন
কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন
টুটবে যবে বন্ধন,
পড়বে মনে নেই সে সাথে বাধতে বুকে দুঃখ রাতে- আপনি গালে যাচবে চুমা চাইবে আদর মাগবে ছোওয়া আপনি যেচে চুমবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।”
“আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
দুলবে তরী রঙ্গে,
প’ড়বে মনে সে কোন্ রাতে
এক তরীতে ছিলেম সাথে,
এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে!”
"যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে!”
উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘অভিশাপ’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
"মিথ্যা শুনিনি ভাই
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই ”
“সে দেশে যবে বাদল ঝরে কাঁদে না কি প্রাণ একেলা ঘরে, বিরহ ব্যথা নাহি কি সেথা বাজে না বাঁশি নদীর তীরে।”
“গগনে কৃষ্ণ মেঘ দোলে – কিশোর কৃষ্ণ দোলে বৃন্দাবনে
থির সৌদামিনী রাধিকা দোলে নবীন ঘনশ্যাম সনে;
দোলে রাধা শ্যাম ঝুলন-দোলায় দোলে আজি শাওনে ”
“হাসি দিয়ে যদি লুকালে তোমার সারা জীবনের বেদনা
আজো তবে শুধু হেসে যাও, আজ বিদায়ের দিনে কেঁদোনা”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদায় বেলায়’ কবিতা থেকে সংগ্রহীত বাণী।
তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়, সে কি মোর অপরাধ? চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী বলে না তো কিছু চাঁদ।
“আমি নিজেই নিজের ব্যাথা করি সৃজন
শেষে সেই আমারে কাঁদায়, যারে করি আপনারি জন।”
উক্তিটি নজরুল ইসলামের ‘লক্ষ্মীছাড়া’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবিক মূল্যবোধ ও সমাজ নিয়ে কিছু উক্তি।
মানুষের ব্যাথা, বেদনার কথা বলা কবি কাজী নজরুল ইসলাম সর্বদাই মানুষের অধিকার নিয়ে সংগ্রাম করেছেন। অপ্রিয় সত্য কথা বলার জন্য কবিকে জেলও খাটতে হয়েছে, সহ্য করতে হয়েছে অসহ্য যন্ত্রনা। জেলে বন্দী অবস্থাতেও লিখে গিয়েছেন অসংখ্য কবিতা, গান। জেলে বন্দী অবস্থায় লিখেছেন কালজয়ী গান - "কারার ঐ লৌহ কপাট" ।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন:
আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।... আমি কবি,আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে...।
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানবিক মূল্যবোধ ও সমাজ নিয়ে কিছু উক্তি নীচে তুলে ধরা হলো।
“পশুর মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে আমাদের লাভ কী, যদি আমাদের গৌরব করার মতো কিছু না-ই থাকে”
“সত্য যদি লক্ষ্য হয়, সুন্দর ও মঙ্গলের সৃষ্টি সাধনা ব্রত হয়, তবে তাহার লেখা সম্মান লাভ করিবেই করিবে।”
“হেথা সবে সম পাপী, আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি!”
“অন্ধের মতো কিছু না বুঝিয়া, না শুনিয়া, ভেড়ার মতো পেছন ধরিয়া চলিও না । নিজের বুদ্ধি, নিজের কার্যশক্তিকে জাগাইয়া তোলে ।”
“দেখিয়া শুনিয়া ক্ষেপিয়া গিয়াছি তাই যাহা আসে কই মুখে” —
হৃদয়গ্রাহী এই উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার কৈফিয়ত’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“বাহিরের স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন না দিই।”
উক্তিটি কাজী নজরুল ইসলামের ‘যুগবাণী’ গ্রন্থের ‘গেছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ!’ প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ-পুত্র হয়,
অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয় !”
সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের ‘বারাঙ্গনা’ কাব্য থেকে এই বানীটি চয়ণ করা হয়েছে।
“আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল মানুষের।”
“বসন্ত এলো এলো এলো রে
পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে
মুহু মুহু কুহু কুহু তানে। ”
“আসে বসন্ত ফুল বনে সাজে বনভূমি সুন্দরী;
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরি ”
“ বসন্ত মুখর আজিদক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনেবনে বনে বিহ্বল বাণী ওঠে বাজি”
“বহু যুবককে দেখিয়াছি যাহাদের যৌবনের উর্দির নিচে বার্ধকের কঙ্গাল মূর্তি।”
"রাখাল বলিয়া কারে করো হেলা, ও-হেলা কাহারে বাজে!
হয়তো গোপনে ব্রজের গোপাল এসেছে রাখাল সাজে !"
কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় “মানুষ” কবিতা থেকে এই উক্তি চয়ণ করা হয়েছে।
“ আপন পাপের বাটখারা দিয়ে অন্যের পাপ মাপি
জবাবদিহির কেন এত ঘটা যদি দেবতাই হও
টুপি পড়ে টিকি রেখে সদা বলো যেন তুমি পাপী নও
পাপী নও যদি কেন এ ভড়ং ট্রেডমার্কার ধুম
পুলিশি পোশাক পরিয়া হয়েছ পাপের আসামী গুম। ”
“সত্য যদি হয় ধ্রুব তোর
কর্মে যদি না রয় ছল,ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল
সত্যের জয় হবেই হবে আজ নয় কাল মিলবেই ফল।”
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তিটি ‘সত্যমন্ত্র’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর
আমি জাগিব না কোলাহল
করি সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব
না।”
“যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই!”
সঞ্চিতা কাব্যগ্রন্থের পাপ কবিতা থেকে এই বানীটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“অভাবের দিনে প্রিয় অতিথি আসার মত পীড়াদায়ক বুঝি আর কিছু নেই! শুধু হৃদয় দিয়ে দেবতার পূজা হয়তো করা যায়, কিন্তু শুধু-হাতে অতিথিকে বরণ করা চলে না।”
কাজী নজরুল ইসলামের জনপ্রিয় এই উক্তিটি তাঁর “মৃত্যুক্ষুধা” উপন্যাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“আর্থ দিয়ে মাড়োয়ারিকে, জমিদার, মহাজনকে বা ভিখারিকে হয়তো খুশি করা যায়, কিন্তু কবিকে খুশি করা যায় না ।”
গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে
পুজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! – মুর্খরা সব শোন
মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনও। ”
“আমায় অভিনন্দিত আপনারা সেই দিনই করেছেন যেদিন আমার লেখা আপনাদের ভালো লেগেছে।”
“আর কেউ হবেনা আপন যখন সব হারিয়ে চলতে হবে।
পথটি আমার নির্জন,আমি নিজেই নিজের ব্যথা করি সৃজন।
‘লক্ষ্মীছাড়া’ নজরুল রচনাবলী থেকে এই বাণীটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“বাহিরের
স্বাধীনতা গিয়াছে বলিয়া অন্তরের
স্বাধীনতাকেও আমরা যেন বিসর্জন
না দিই।”
“শোন মর্ত্যের জীব অন্যের যত করিবে পীড়ন নিজে হবে তত ক্লীব।”
“অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে; সর্বনির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”
“যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাঁড়া করা যাবে, ততবার তা পড়ে যাবে ।”
“ব্যর্থ না হওয়ার সব চাইতে নিশ্চিন্ত পথ হলো সাফল্য অর্জনে দৃঢ় সঙ্কল্প হওয়া।”
“তিনিই আর্টিস্ট, যিনি আর্ট ফুটাইয়া তুলিতে পারেন । আর্টের অর্থ সত্য প্রকাশ এবং সত্য মানেই সুন্দর; সত্য চিরমঙ্গলময়।”
“অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যেকে অস্বীকার করে ফেলা হয় । তাতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে, মাথা নিচু করে আনে ও রকম মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক ভালো।”
“রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা, তাই
লিখে যাই এ রক্ত লেখা।”
‘‘আজি হ’তে শত বর্ষে আগে, কে কবি,
স্মরণ তুমি করেছিলে আমাদের শত
অনুরাগে"
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ধর্মীয় কিছু উক্তি
“পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক।”
কাজী নজরুল ইসলামের এই উক্তিটি ‘সত্যমন্ত্র’ কবিতা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে।
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে।। ”
“খোদার কি আশ্চর্য মহিমা । রাজা–যার অত ধন মালামাত্তা, অত প্রতাপ, সেও মরে মাটি হয় । আর যে ভিখারি খেতে না পেয়ে তালপাতার কুঁড়েতে কুঁকড়ে মরে পড়ে থাকে, সেও মাটি হয়।”
“ হিন্দু না ওরা মুসলিম এই জিজ্ঞাসে কোন জন হে, কাণ্ডারি বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র ”
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী উক্তি
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বিদ্রোহ যেন তাঁর রক্তে মিশে ছিল, যার দরুন তাঁকে সইতে হয়েছে অবর্ণনীয় যন্ত্রনা, অত্যাচার। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তিনি কলমকেই অস্ত্র বানিয়ে বিদ্রোহ করে গিয়েছেন তাঁর বিদ্রোহী কবিতার মাধ্যমে। বিদ্রোহ নিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের কয়েক টি উক্তি নীচে তুলে ধরা হলো।
“বল বীর-বল উন্নত মম শির! শির নেহারী’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রীর”
“আমি বিদ্রোহী ভৃগু, ভগবান বুকে এঁকে দিই পদ-চিহ্ন।”
“ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান
আসি’ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার’ কবিতা থেকে সংগ্রহীত উক্তি।
“ আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেনী, তন্বী নয়নে বহ্নি, আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি।”
“আমি বেদুইন, আমি চেঙ্গিস, আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কূর্ণিশ।”
বিদ্রোহী কবির বিদ্রোহী এই বানীটি ‘সঞ্চিতা’ কাব্য গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
“মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।”
“কারার ঐ লৌহকপাট, ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট, রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।”
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আরো কিছু উক্তি যা আমাদের মন ছুয়ে যায়।
“কান্না হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা ?”
কাজী নজরুল ইসলামের ‘উপেক্ষিত’ কবিতা থেকে এই উক্তিটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরনা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।”
“নারীর বিরহে নারীর মিলনে নর পেলো কবি প্রাণ
যত কথা তার হইল কবিতা শব্দ হইল গান।”
“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি
অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘নারী’ কবিতা থেকে উক্তিটি সংগ্রহ করা হয়েছে।
“শিরী লায়লীর খোঁজে ফরহাদ খোঁজে কায়েস …
খুঁজে ফেরে হেথা যুবা সেলিম নূরজাহানের দূর সাকিম
চাঁদ বাজারে এই নওরোজের
দোকান বসেছে মোমতাজের,
সওদা করিতে এসেছে ফের
শাহজাহান হেথা রূপ পাগব
বাণীপাগ্রিয় রূপ ধরে এতদিনে এলে আমার কবিতা তুমি, আঁখির পলকে মরুভূমি যেনো হয়ে গেলো বনভূমি।”
“সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা!
শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!’ (মা, সর্বহারা)
“আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায়ে মল,
মাথায় ঘোমটা, ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল ও শিকল!
যে-ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু ওড়াও সে আবরণ!
দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন ঐ যতো আবরণ।”
"তব মুখপানে চেয়ে আজ
বাজ - সম বাজে মর্মে লাজ ;
তব অনাদর অবহেলা স্মরি 'স্মরি ’
তারি সাথে স্মরি মাের নির্লজ্জতা
আমি আজ প্রাণে প্রাণে মরি ।"
"বন্ধু , বলিনি ঝুট ,
এইখানে এসে লুটাইয়া পড়ে সকল রাজমুকুট।
এই হৃদয়ই সে নীলাচল , কাশী , মথুরা , বৃন্দাবন ,
বুদ্ধগয়া এ , জেরুজালেম এ , মদিনা , কাবা - ভবন ,
মসজিদ এই , মন্দির এই , গির্জা এই হৃদয়,
এইখানে বসে ঈসা মুসা পেল সত্যের পরিচয়।
এই রণ - ভূমে বাঁশীর কিশাের গাহিলেন মহা - গীতা ,
এই মাঠে হ’ল মেষের রাখাল নবী খােদর মিতা।
এই হৃদয়ের ধ্যান - গুহা - মাঝে বসিয়া শাক্যমুনি
ত্যজিল রাজ্য মানবের মহা - বেদনার ডাক শুনি ।
এই কন্দরে আরব - দুলাল শুনিতেন আহবান ,
এইখানে বসি ' গাহিলেন তিনি কোরানের সাম - গান !
মিথ্যা শুনিনি ভাই ,
এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনাে মন্দির - কাবা নাই ।""
সবশেষে বলার,
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এক জ্ঞানের সমুদ্র, তাকে পুরো টা জানতে গেলে আমাদের কয়েক যুগ লেগে যাবে। একটা আর্টিকেল এ তার হিমালয় সম ভান্ডার থেকে কয়েক টি পাথর তুলে ধরা যায় মাত্র। পরে আরো কিছু উক্তি তুলে ধরা হবে।
বি: দ্র:
তথ্য গুলি কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য সৃষ্টি (কবিতা, কাব্যগ্রন্থ) ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
***কিছু ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে ক্ষমা করে দেবেন***
Comments
Post a Comment