Skip to main content

Posts

Showing posts with the label ইতিহাস

সাম্প্রতিক পোস্ট

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।   অথবা,  একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।  অথবা,  নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও।             উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়।  এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়।  নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা:       পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...

সাঁওতাল বিদ্রোহ

  সাঁওতাল বিদ্রোহ           ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের পূর্বে সংগঠিত প্রতিবাদী আন্দোলনগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাঁওতাল উপজাতির অভ্যুত্থান (১৮৫৫ খ্রি.)। ড. কালিকিংকর দত্ত তাঁর “দি সাঁওতাল ইনসারেক্সন অব ১৮৫৫-৫৭' গ্রন্থে লেখেন—“বাংলা ও বিহারের ইতিহাসে এই পর্ব (সাঁওতাল বিদ্রোহ) নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটায়।” সাঁওতাল বিদ্রোহের কারণ— (১) রাজস্বের বোঝা—       কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করলে সাঁওতালদের বাসভূমি বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বীরভূম, ছোটোনাগপুর প্রভৃতি অঞ্চল কোম্পানির রাজস্বের অধীনে আসে। ফলে এসব অঞ্চলে বসবাসকারী সাঁওতালরা রাজমহলের পার্বত্য অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করে এবং রুক্ষ মাটিকে কৃষিকাজের উপযুক্ত করে জীবনধারণ করতে থাকে। এই অঞ্চল ‘দামিন-ই-কোহ’ (পাহাড়ের প্রান্তদেশ) নামে পরিচিত হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে সরকার এই অঞ্চলকেও জমিদারি বন্দোবস্ত ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে সাঁওতালদের ওপর রাজস্বের বোঝা চাপে। এতে সাঁওতালরা ক্ষুব্ধ ও বিদ্ৰোহমুখী হয়৷

স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়

স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়                   স্ত্রীশিক্ষা প্রসারে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদ্যাসাগর মহাশয় বিশ্বাস করতেন যে, স্ত্রীজাতির উন্নতি ছাড়া দেশের ধর্ম, সমাজ ও জীবনধারার স্থায়ী বা প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয়। (১) বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা– সরকারি সাহায্য ছাড়াই নিজের উদ্যোগে তিনি ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি গ্রামাঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের ওপর জোর দেন। নারীদের পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে তিনি ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের সঙ্গে মিলিতভাবে বেথুন স্কুল তৈরি করেন। (২) কলেজ প্রতিষ্ঠা– নারীদের উচ্চশিক্ষার আলোয় নিয়ে আসার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেথুন কলেজ, মেট্রোপলিটান কলেজ (যার এখন নাম ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’)। (৩) শিক্ষা সংগঠন প্রতিষ্ঠা– স্ত্রীশিক্ষার সুষ্ঠু প্রসারের লক্ষ্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের মেদিনীপুর, হুগলি, বর্ধমান–সহ বিভিন্ন জেলায় ‘স্ত্রীশিক্ষা সম্মিলনী’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। মহাদেব গোবিন্দ রানাডে বিদ্যাসাগরের নারীকল্যাণকর ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা জান...

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - ‘ট্র্যাডিশনাল মডার্নাইজার’

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর - ‘ট্র্যাডিশনাল মডার্নাইজার’             ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি সংস্কৃত কলেজে র  ইংরেজি পঠনপাঠন প্রবর্তন করেন। বিদ্যাসাগর মহাশয় সকলের জন্য সংস্কৃত কলেজের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। তাঁর মূল বক্তব্য ছিল ‘যুক্তির বিকাশের জন্য পাশ্চাত্য-শিক্ষা’র প্রয়োজন। কিন্তু সেই শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। এজন্য তিনি বাংলা স্কুল প্রতিষ্ঠার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তাঁর উদ্যোগে বিভিন্ন জেলায় বহু মডেল স্কুল চালু হয়। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। কিন্তু পাশ্চাত্য-শিক্ষার প্রতি তাঁর কোনো অনীহা ছিল না। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ের মাধ্যমে ভারতবাসীর সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সম্ভব। এই কারণে ড. অমলেশ ত্রিপাঠী বিদ্যাসাগর মহাশয়কে “Traditional Moderniser” বলে অভিহিত করেছেন।

সমাজসংস্কাররূপে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান।।

সমাজসংস্কাররূপে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান             হুগলি জেলার রাধানগর গ্রামে রাজা রামমোহন রায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে ১৭৭৪ খ্রি.) জন্মগ্রহণ করেন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ভারত পথিক বলে সম্মান জানিয়েছেন। ভারতের ধর্ম ও সমাজ সংস্কারের কাজে তাঁর নিরলস সাধনার কারণে তাঁকে আধুনিক ভারতের জনক বলে অভিহিত করা হয়। ড. বিপানচন্দ্রের মতে—“উনিশ শতকের প্রথম লগ্নে ভারতীয় আকাশে রামমোহন রায় উজ্জ্বলতম নক্ষত্ররূপে ভাস্বর ছিলেন”।

সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো।

সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগরের অবদান               ঊনবিংশ শতকের আর–একজন অসাধারণ পণ্ডিত ও সংস্কারক ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (১৮২০–৯১ খ্রি.)। মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগরের প্রতি সম্মান জানিয়ে লিখেছেন—“ বিধাতা বিদ্যাসাগরের প্রতি বঙ্গভূমিকে মানুষ করিবার ভার দিয়াছিলেন”। এবং প্রখ্যাত কবি মাইকেল মধুসূদন লিখেছেন, বিদ্যাসাগরের মধ্যে ছিল সন্ন্যাসীর প্রজ্ঞা, ইংরেজের উদ্যম এবং বাঙ্গালী–মায়ের কোমল হৃদয়।

উনিশ শতকের সংস্কার আন্দোলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো।

সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা               উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে যে গুটিকয়েক সংস্কারক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রচলিত অর্থে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হয়েও সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী বিদ্যাসাগর ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারের কাজে তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। 

উডের ডেসপ্যাচ বা উডের প্রতিবেদন।

উডের ডেসপ্যাচ            ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে ইংল্যান্ডের বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি স্যার চার্লস উডের নেতৃত্বে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট একটি শিক্ষা কমিটি গঠন করে। এই কমিটি প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য যে সুপারিশ পেশ করেন (১৮৫৪ খ্রি., ১৯ জুলাই ) তা উডের ডেসপ্যাচ বা উডের প্রতিবেদন নামে পরিচিত।

মানবসেবার আদর্শ সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারা সংক্ষেপে উল্লেখ করো।

মানবসেবার আদর্শ সম্পর্কে স্বামী বিবেকানন্দের চিন্তাধারা                 প্রাচীনকাল থেকেই সনাতন ভারতবর্ষে গৌতমবুদ্ধ, শঙ্করাচার্য, শ্রীচৈতন্যদেব, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস–সহ যেসব চিরপ্রণম্য মহাপুরুষ মানবসেবার আদর্শ প্রচার করেছিলেন, তাঁদেরই সার্থক উত্তরপুরুষ ছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। বিবেকানন্দই প্রথম বলেন, “জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”।

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ?

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল      ভারতীয় জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মূলত ভারতবাসীর আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও ব্রিটিশবিরোধী ক্ষোভের হাত থেকে ব্রিটিশ শাসনকে রক্ষা করার জন্যই।  জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য (১) কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন— উদ্দেশ্য ঘোষণা—বোম্বাইয়ের গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজ হল জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে (১৮৮৫ খ্রি., ২৮ ডিসেম্বর) সভাপতির ভাষণে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে চারটি মূল উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এগুলি হল—   (i) ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈচিত্রে ভরা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের দেশপ্রেমীদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও একাত্মতা গড়ে তোলা, (ii) সম্প্রীতির দ্বারা জাতি, ধর্ম, প্রাদেশিকতার তুচ্ছ সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় সংহতির পথ প্রশস্ত করা, (iii) শিক্ষিতদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করে সামাজিক ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ণয় করা, (iv) ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য ভবিষ্যৎ কর্মসূচি গ্রহণ করা।

ভারতসভা

ভারতসভা       ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে (এখনকার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউস) অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে ভারতসভা গঠন করা হয়। ভারতসভা গঠনে মূল উদ্যোগ নেন। সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও আনন্দমোহন বসু এবং তাঁদের সাহায্য করেন শিবনাথ শাস্ত্রী এবং দ্বারকানাথ গাঙ্গুলি। উদ্দেশ্য ভারতসভা গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল— (১) এক ঐক্যবদ্ধ ব্রিটিশবিরোধী জনমত গড়ে তোলা; (২) বিভিন্ন ভাষা, গোষ্ঠী, ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্ত ভারতবাসীকে একই রাজনৈতিক ভাবনায় দীক্ষিত করা; (৩) হিন্দু–মুসলিমদের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ গড়ে তোলা; (৪) জাতীয় রাজনৈতিক আন্দোলনগুলিতে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের শামিল করানো। 

ইলবার্ট বিল বিতর্কের গুরুত্ব পর্যালোচনা করো।

ইলবার্ট বিল বিতর্কের গুরুত্ব           বিচারবিভাগে ইউরোপীয় ও ভারতীয় বিচারকদের সমমর্যাদা দানের লক্ষ্যে ভাইসরয় লর্ড রিপনের পরামর্শে তাঁর আইন সচিব কোর্টনি ইলবার্ট এক খসড়া আইন প্রবর্তন করেন, যা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত। বিতর্কের গুরুত্ব (১) প্রত্যক্ষ গুরুত্ব— (i)ইউরোপীয়দের মধ্যে—ইলবার্ট বিল প্রকাশ হওয়ার পর সর্বপ্রথম কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার ব্রানসনের নেতৃত্বে গঠিত হয় ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন। এই সমিতির নেতৃত্বে ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। ভারতের ইংলিশম্যান পত্রিকা ও ইংল্যান্ডের ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশিত হয়। (ii) সংশোধন—ইলবার্ট বিলকে কেন্দ্র করে ইউরোপীয়দের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সরকার বিলটির সংশোধন করতে বাধ্য হয়। নতুন সংশোধিত আইনে বলা হয় যে, এখন থেকে ভারতীয় বিচারকগণ ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার সময় জুরির সাহায্য নিতে বাধ্য থাকবেন। বলাবাহুল্য এই জুরিদের অধিকাংশই ছিলেন ইউরোপীয়। (iii) ভারতীয়দের মধ্যে—ইউরোপীয়দের চাপে ইলবার্ট বিল সংশোধন করা হলে ভারতীয়দের মধ্যেও তীব্র প...

নব্যবঙ্গ বা ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের অবদানগুলির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

নব্যবঙ্গ বা ইয়ংবেঙ্গল আন্দোলনের অবদান     খ্রিস্টীয় উনিশ শতকে বাংলার বুকে নব্যবঙ্গ দলের কার্যকলাপ সীমাবদ্ধ ছিল ঠিকই, তা বলে এঁদের অবদানকে কখনোই অস্বীকার করা সম্ভব নয়। নানা দিক থেকে আজকের সমাজ এঁদের কাছে ঋণী হয়ে আছে। নব্যবঙ্গীয় আন্দোলনের অবদান— (১) বিবিধ কুসংস্কারের বিরোধিতায়— নব্যবঙ্গ দলের সদস্যরা হিন্দুসমাজে প্রচলিত গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রথা, কৌলীন্য প্রথা, দাস প্রথা, বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ প্রথা–সহ বিভিন্ন কুসংস্কারের বিরোধিতা করেছিলেন। (২) বিভিন্ন বৈষম্যের বিরোধিতায়— তৎকালীন সমাজে নারী পুরুষের বৈষম্য, বিচারব্যবস্থায় ভারতীয় ও ইরোপীয়দের বিচার বৈষম্য, জাতিগত বৈষম্য, চিরস্থায়ী ভূমি বন্দোবস্ত এমনকি পুলিশিব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্রিটিশের বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায় ইয়ংবেঙ্গল সদস্যগণ। (৩) নারীকল্যাণে— নারীজাতির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীশিক্ষার প্রসার ছিল নব্যবঙ্গ দলের অন্যতম কর্মসূচি। এই কারণে কেউ কেউ আবার এঁদের মধ্যে দেখেছেন উনিশ শতকের নবজাগরণের উষালগ্ন। (৪) ভাবজগতে পরিবর্তন— এঁদের উদ্যোগে প্রকাশিত হয় ‘জ্ঞানান্বেষণ’, ‘দ্য এনকোয়ারার’, ‘দ্য বেঙ্গল স্পেকট...

রামমোহন রায়কে কেন ‘ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ’ মনে করা হয় ?

ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ রাজা রামমোহন রায়ই প্রথম আধুনিক যুক্তিবাদী মনন ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন ও সংস্কারমুক্ত ধর্মপ্রচারের কথা বলেন। এ ছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি তাঁর সমর্থন ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর রাজনৈতিক বিচার–বিশ্লেষণ তাঁকে ‘প্রথম আধুনিক মানুষ’ অভিধায় ভূষিত করেছে। এ প্রসঙ্গে রামমোহন রায়ের মৃত্যুশতবর্ষে (১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ইংরেজি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “রামমোহন তাঁর আমলের বিশ্বের সমস্ত মানুষের মধ্যে ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সম্পূর্ণরূপে আধুনিক যুগের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন”।  রামমোহন রায়–ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ    (১) সমাজসংস্কারের প্রথম উদ্যোগের জন্য—  ‘সতীদাহ’ প্রথা রোধের লক্ষ্যে রামমোহন রায় সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সংবলিত এক আবেদনপত্র বড়োলাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে পাঠান। বেন্টিঙ্ক রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৭ নং রেগুলেশন (Regulation–XVII) জারি করে সতীদাহ প্রথা রদ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলীন্য প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, কন্যাপণ, গঙ্গাসাগ...

ঊনবিংশ শতকে ভারতে মধ্যবিত্তশ্রেণির উন্মেষের কারণ কী ?

মধ্যবিত্তশ্রেণির উন্মেষ— ঊনবিংশ শতকে ভারতের সমাজে মধ্যবিত্তশ্রেণির উন্মেষ ঘটে নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে। (১) ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড হার্ডিঞ্জ সরকারি চাকুরিতে ইংরেজি জানা বাধ্যতামূলক করেন। এরফলে ভারতীয় সমাজে ইংরেজি শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয় এবং একদল ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্তশ্রেণির উদ্ভব হয়। (২) ব্রিটিশ সরকার সস্তায় প্রশাসনিক কাজ চালানোর জন্য একদল কেরানি তৈরি করে। এরা মধ্যবিত্তশ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হয়।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা–সংক্রান্ত বিতর্ক উল্লেখ করো।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিতর্ক— জাতীয় কংগ্রেসের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন, তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক আছে। বিভিন্ন মত— (১) চরমপন্থী নেতা লালা লাজপত রায়–এর মতে, তৎকালীন বড়োলাট লর্ড ডাফরিন–ই কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা। ‘Young India’ পত্রিকায় তিনি লিখেছেন, কংগ্রেস ছিল ডাফরিনের মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনা (“Congress was a product of Dufferin's brain”)। (২) কেমব্রিজ ঐতিহাসিক ড. অনিল শীল মনে করেন—জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় ডাফরিনের ভূমিকা অতিকথন ছাড়া আর কিছুই নয়।

জাতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশ সরকারের ‘নিরাপদ নিয়ামক’ (Safety Valve) বলা যায় কী ?

জাতীয় কংগ্রেসকে ব্রিটিশ সরকারের ‘নিরাপদ নিয়ামক’ (Safety Valve) বলা যায় কী ?            ব্রিটিশ সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম গোপন রিপোর্ট থেকে জানতে পারেন ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ওপর ভারতবাসী ক্ষুব্ধ এবং যে–কোনো সময় এই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তাই তিনি এই ক্ষোভকে প্রশমনের জন্য ব্রিটিশ সরকারের ‘সেফটি ভাল্‌ব’ হিসেবে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। কংগ্রেস সৃষ্টির এই তত্ত্ব ‘সেফটি ভাল্‌ব’ তত্ত্ব নামে পরিচিত। জাতীয় কংগ্রেস—নিরাপদ নিয়ামক সমর্থন— ঐতিহাসিক রজনী পামদত্ত প্রমুখের মতে, ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে ‘নিরাপদ নিয়ামক’-এর কাজ করার জন্যই কংগ্রেস গঠিত হয়েছিল। কংগ্রেস গঠনের পশ্চাতে হিউমের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ভারতবাসীর ক্রমবর্ধমান অসন্তোষজনিত বিক্ষোভের কবল থেকে ইংরেজ শাসনকে রক্ষা করা। কারণ তিনি মনে করেছিলেন যে, ভারতবাসী ব্রিটিশ অত্যাচারের বিরুদ্ধে যে–কোনো সময়ে বিদ্রোহ করতে পারে। তাই তিনি চেয়েছিলেন একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠনের মাধ্যমে দেশের প্রগতিশীল অংশকে এই বিদ্রোহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে। কংগ্রেস ছিল ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের পক্ষপাতিত্বে ...

ইলবার্ট বিল আন্দোলন

ইলবার্ট বিল  প্রবর্তন: ১৮৭৩ খ্রি.,–এর ফৌজদারি আইন অনুসারে মফস্‌সলের ভারতীয় দায়রা বিচারকগণ কোনো শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয়র বিচার করতে পারতেন না। লর্ড রিপনের পরামর্শে আইন সচিব মি. ইলবার্ট এই বৈষম্যমূলক আইনের পরিবর্তে যে খসড়া আইন প্রস্তুত করেন (১৮৮৩ খ্রি.) তা ইলবার্ট বিল নামে পরিচিত হয়।

অস্ত্র আইন

অস্ত্র আইন (১৮৭৮ খ্রি.) প্রবর্তন ভারতে আগত ব্রিটিশ গভর্নর - জেনারেলদের মধ্যে অন্যতম নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন লর্ড লিটন। ভারতবাসীর প্রতিবাদ করার ক্ষমতাকে হরণ করার লক্ষ্যে তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে অস্ত্র আইন (Arms Act, 1878) জারি করেন।

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (১৮৭৮ খ্রি.)

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন প্রবর্তন সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর–জেনারেল লর্ড লিটন দেশীয় পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act, 1878) জারি করেন। পটভূমি ঊনবিংশ শতকে দেশীয় সংবাদপত্রগুলিতে সরকারি কর্মচারীদের অন্যায় আচরণ, অর্থনৈতিক শোষণ, দেশীয় সম্পদের বহির্গমন, দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ইত্যাদি নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। ইতিহাসবিদ এ.আর.দেশাইয়ের মতে, “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে সংবাদপত্র হল এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম”।

নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন

নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন আইন প্রবর্তনের কারণ ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে জাতীয়তাবাদী নাটক রচনা করে ব্রিটিশের শোষণ ও অপশাসনের বিরুদ্ধে জনমত সংগঠিত করার কাজ শুরু হয়। অমৃতলাল বসুর ‘চা–কর দর্পণ’, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ নাটকে অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গ সাহেবদের মুখোশ খুলে দেওয়া হয়। অমৃতলাল বসু ও উপেন্দ্রনাথ দাস ‘হনুমান চরিত’ নামক প্রহসন নাটকে ইংরেজের প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রুপ প্রকাশ করেন। গ্রামেগঞ্জে ব্রিটিশ বিরোধী মনোভাব সৃষ্টির কাজে নাটকগুলি সাফল্য পায়। সরকার দমনমূলক আইন জারি করে দেশাত্মবোধক নাটকের প্রচার বন্ধ করে দিতে উদ্যত হয়।