Skip to main content

Posts

Showing posts from December, 2021

সাম্প্রতিক পোস্ট

ইতিহাস MCQs For WBCS EXAM, SET 01

ইতিহাস MCQs For WBCS EXAM প্রশ্নঃ ১.  গৌতম বুদ্ধ কোথায় নির্বাণ লাভ করেছিলেন? (a) লুম্বিনী (b) সারণাথ (c) কুশিনগর (d)  বুদ্ধগয়া উত্তরঃ d প্রশ্নঃ ২.  মৃচ্ছকটিকম নাটকটি কার লেখা? (a) বিসাখদত্ত (b) সুদ্রক (c)  বানভট্ট (d)  ভাস উত্তরঃ b

ক্রান্তীয় উচ্চচাপযুক্ত শান্তবলয়

ক্রান্তীয় উচ্চচাপযুক্ত শান্তবলয় উত্তর গোলার্ধে কর্কটক্রান্তি রেখা ও দক্ষিণ গোলার্ধে মকরক্রান্তিরেখা সংলগ্ন ২৫°-৩৫° অক্ষরেখার মধ্যবর্তী বলয়াকৃতি উচ্চচাপ অঞ্চলকে একত্রে ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় বলে। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে একে যথাক্রমে কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় বলা হয়।

বায়ুমণ্ডলের উপকারিতা বা কার্যকারিতা

বায়ুমণ্ডল অদৃশ্য, বর্ণহীন, গন্ধহীন হলেও বায়ুমণ্ডলের কার্যকারিতা অপরিসীম ও বহুমুখী। 🟐  বায়ুপ্রবাহ পৃথিবীর সর্বত্র ঝড়-বৃষ্টি ঘটিয়ে উদ্ভিদ জন্মাতে সাহায্য করে। উদ্ভিদই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জীবকুলকে খাদ্যের জোগান দেয়। 🟐  প্রাণীজগতের শারীরবৃত্তীয় প্রয়োজন মেটাতে বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম। 🟐  বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে পৃথিবীব্যাপী তাপের সমতা রক্ষিত হয়। বায়ুপ্রবাহের অভাবে বিভিন্ন তাপবলয়ের মধ্যে তাপের বিনিময় ঘটত না, ফলে উষ্ণমণ্ডল আরও উষ্ণতর এবং হিমমণ্ডল আরও শীতলতর হতে পারত। 🟐  বায়ুমণ্ডল না থাকলে আমরা কোনো শব্দ শুনতে পেতাম না। শব্দ বায়ুর মাধ্যমে আমাদের কর্ণগোচর হয়।

হেটেরোস্ফিয়ার

হেটেরোস্ফিয়ার                      ‘হেটেরো’ শব্দের অর্থ ‘ বিষমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ। বায়ুমণ্ডলের হোমোস্ফিয়ার স্তরের ওপরের অংশে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত এবং বায়ুমণ্ডলের স্তরগুলো একই রকম থাকে না বলে ভূপৃষ্ঠের ওপরে ৯০ কিলোমিটার থেকে ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুস্তরকে হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল বলা হয়।

ওজোনোস্ফিয়ার

ওজোনোস্ফিয়ার                     স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উপর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত যে বায়ুস্তরটি রয়েছে তাকে ওজোনস্তর বা ওজোনোস্ফিয়ার বলা হয়। এই স্তরে ওজোন গ্যাসের (O3) একটি স্তর বা পর্দা আছে, যা ভেদ করে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি (Ultra Violet Ray) ভূপৃষ্ঠে আসতে পারে না। ওজোন গ্যাসের স্তরটি সূর্যের তাপ ও অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে নেয় বলে এই স্তরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয়। এই স্তরের সর্বোচ্চ উষ্ণতা ৭৬° সেন্টিগ্রেড। 

থার্মোস্ফিয়ার

থার্মোস্ফিয়ার           মেসোপজের ওপরে প্রায় ৫০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা অত্যন্ত দ্রুতহারে বৃদ্ধি পায়৷ এই স্তরকে থার্মোস্ফিয়ার বলে। এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমায় উষ্ণতা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২০০° সেন্টিগ্রেড। এই স্তরের প্রধান উপাদান হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। উপাদানগুলি মহাজাগতিক রশ্মির প্রভাবে আয়নিত অবস্থায় থাকে এবং স্তরটি তড়িৎ সুপরিবাহী হয়। আয়নিত কণার প্রাধান্য থাকায় এই স্তরকে আয়নস্তরও বলা হয়।

মেসোস্ফিয়ার

মেসোস্ফিয়ার        স্ট্র্যাটোপজের ওপর থেকে বায়ুমণ্ডলের যতদূর উচ্চতা পর্যন্ত উষ্ণতা কমতে থাকে, সেই অংশটিকে মেসোস্ফিয়ার বলে। মেসোস্ফিয়ার স্তরটি স্ট্র্যাটোপজ  স্তরের ওপর ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় এই স্তরে বায়ুর তাপমাত্রা সবচেয়ে কম থাকে (কম বেশি—৯৩° সেলসিয়াস)।

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার

স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার           ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের পরবর্তী স্তর অর্থাৎ, ভূপৃষ্ঠের ওপরে ১৮ কিমি থেকে প্রায় ৫০ কিমি পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলীয় স্তরকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা শান্তমণ্ডল বলা হয়। এই স্তরে বায়ুর ঘনত্ব বেশ কম হওয়ায় একে ‘সূক্ষ্মমণ্ডল’ ও বলা হয়। এই স্তরের নিম্নাংশে বায়ুর উষ্ণতা অপরিবর্তিত থাকলেও, ক্রমশ উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতাও বাড়তে থাকে। এই স্তরে বায়ুপ্রবাহের গতি খুব ধীর।

ট্রপোস্ফিয়ার

ট্রপোস্ফিয়ার           ভূপৃষ্ঠসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলীয় স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা হ্রাস পেতে থাকে। পরিবর্তনশীল এই স্তরকে ট্রপোস্ফিয়ার বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে এর বিস্তৃতি প্রায় ১৮ কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৮ কিমি। সাধারণভাবে এই স্তরে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে উষ্ণতা হ্রাস পায় ৬.৪° সেলসিয়াস হারে। এই স্তরে বায়ুর গড় ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। বায়ুমণ্ডলের মোট ভরের প্রায় ৭৫ ভাগ এই স্তরে অবস্থান করায় এই স্তরটিকে ‘ঘনমণ্ডল’ বলে।

হোমোস্ফিয়ার

হোমোস্ফিয়ার           ‘হোমো’ শব্দের অর্থ ‘সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ’। ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত অংশে, বায়ুমণ্ডলের রাসায়নিক গঠন বা রাসায়নিক সংযুক্তি অর্থাৎ , বিভিন্ন গ্যাসের মিশ্রণের অনুপাত প্রায় একই রকম থাকে। এই কারণে সমবৈশিষ্ট্যপূর্ণ এই বায়ুমণ্ডলীয় স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলা হয়। এই স্তরেই বায়ুমণ্ডলের স্থায়ী উপাদান (বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান) গুলির সঙ্গে অস্থায়ী উপাদান (বিভিন্ন কঠিন কণিকা ও জলীয়বাষ্প) বা পরিবর্তনশীল উপাদানগুলি অবস্থান করে।

পললশঙ্কু এবং বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য

  পললশঙ্কু এবং বদ্বীপের মধ্যে পার্থক্য Sl. No. পললশঙ্কু ব-দ্বীপ 1 পর্বতের পাদদেশে সমভূমিতে প্রবেশের মুখে নদীর মধ্যগতিতে পার্বত্য অঞ্চলের শিলাখণ্ড, নুড়ি, বালি, কাদা প্রভৃতি নদীতে সঞ্চিত হয়ে পললশঙ্কু গঠিত হয়। মোহানার কাছে নদীর নিম্নগতিতে নদীবাহিত অতি সূক্ষ্ম পদার্থ নদীর মোহনা কিংবা সাগর বা হ্রদের অগভীর অংশে সঞ্চিত হয়ে ব-দ্বীপ গঠিত হয়। 2 পললশঙ্কুর আয়তন ব-দ্বীপের তুলনায় অনেক কম। ব-দ্বীপ পললশঙ্কুর তুলনায় আয়তনে অনেক বড়ো হয়। 3 পললশঙ্কু সাধারণত তিনকোণা হাতপাখা আকৃতির হয়। এদের নীচের অংশ চওড়া কিন্তু উপরের অংশ ক্রমশ সরু হয়ে শঙ্কুর আকৃতি ধারণ করে। ব-দ্বীপের আকৃতি মাত্রাছাড়া 'ব'-এর মতো হয়।

গিরিখাত এবং ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য

  গিরিখাত এবং ক্যানিয়নের মধ্যে পার্থক্য Sl. No. গিরিখাত ক্যানিয়ন 1 গিরিখাত আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বলে বহু উপনদী গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। ফলে নদীখাত সামান্য প্রশস্ত হয়। ক্যানিয়ন শুষ্ক পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয় বলে ক্যানিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর সঙ্গে কোনো উপনদী মিলিত হয় না। ফলে নদীখাত একদম সংকীর্ণ হয়। 2 আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত নদীতে গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। শুষ্ক মরু ও মরুপ্রায় উচ্চভূমিতে প্রবাহিত নদীতে ক্যানিয়নের সৃষ্টি হয়। 3 গিরিখাত গঠনের সময় অধিক নিম্নক্ষয়ের সঙ্গে সঙ্গে সামান্য পার্শ্বক্ষয়ও হয়ে থাকে। ক্যানিয়ন গঠনের সময় পার্শ্বক্ষয় একদম হয় না শুধু নদীর নিম্নক্ষয়ই হয়ে থাকে। 4 গিরিখাতের আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো। ক্যানিয়নের আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো। 5 যেহেতু আর্দ্র পার্বত্য অঞ্চলে গিরিখাত সৃষ্টি হয়, সেহেতু বৃষ্টিপাতের জন্য নদীর দুই পাড়ের ক্ষয় সামান্য

‘নব’ ও ‘কেটল'

হিমবাহের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল ‘নব ও কেটেল'। কেটল (Kettle)—            আউট-ওয়াশ সমভূমিতে নানারকম অবক্ষেপের মধ্যে চাপা পড়া বিরাট বরফের চাঁই কালক্রমে গলে গেলে অনেক সময় ছোটো বড়ো আকারের গর্ত সৃষ্টি হয়—এই সব গর্তগুলোকে কেটেল বলে। কেটেল নামে এইসব গর্তগুলো জলপূর্ণ হয়ে যে হ্রদ সৃষ্টি করে, তাকে কেটল হ্রদ (Kettle Lake) বলে। ইউরোপ মহাদেশের স্কটল্যান্ডের ওর্কনে দ্বীপে ‘কেটল’ ও ‘কেটল হ্রদ’ দেখা যায়।

কর্তিত স্পার

কর্তিত স্পার               হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলির মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হল কর্তিত স্পার।

ইনসেলবার্জ

ইনসেলবার্জ          অনেক সময় মরুভূমির স্থানে স্থানে কঠিন শিলায় গঠিত অনুচ্চ ক্ষয়ীভূত পাহাড় টিলার আকারে বিক্ষিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যুগ যুগ ধরে ক্ষয় পেয়ে এইসব টিলার মতো পাহাড়ের উচ্চতা খুব কম, পর্বতগাত্রের ঢালখুব বেশি, পর্বতগাত্র মসৃণ এবং দেখতে গোলাকার হয়। গোলাকৃতির এইসব অনুচ্চ টিলাকে ইনসেলবার্জ বলে।

নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য

  নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য Sl. No. নদী উপত্যকা হিমবাহ উপত্যকা 1 মেরু প্রদেশের বরফাবৃত অঞ্চল এবং উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কেবলমাত্র বরফে ঢাকা উঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই হিমবাহ উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 2 পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা প্রধানত ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো হয়। হিমবাহ উপত্যকা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। 3 পার্বত্য ও উচ্চ সমভূমি অঞ্চলে নদী স্রোতের গতিবেগ প্রবল হয়, নিম্নভূমিতে নদী স্রোতের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। বেশিরভাগ সময়েই হিমবাহ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। 4 নদী উপত্যকা আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়। হিমবাহ উপত্যকা সোজা পথে অগ্রসর হয়। 5 সাধারণত নদী উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য বেশি হয়। হিমবাহ উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য কম হয়। 6 নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। হিমব

নদীর কাজ ও হিমবাহের কাজের মধ্যে পার্থক্য

  নদীর কাজ ও হিমবাহের কাজের মধ্যে পার্থক্য Sl. No. নদীর কাজ হিমবাহের কাজ 1 মরু অঞ্চল, হিমশীতল অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র নদীর কাজ স্পষ্ট লক্ষ করা যায়। শীতল মেরু অঞ্চল ও উচ্চ-পার্বত্য অঞ্চল ব্যতীত হিমবাহের কাজ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে লক্ষ করা যায় না। 2 নদী প্রবাহপথে বাঁধা পেলে, বাঁধাকে অতিক্রম করবার জন্য এঁকে-বেঁকে প্রবাহিত হয়। হিমবাহ প্রবাহপথে বাঁধা পেলে, বাঁধা অতিক্রম করার জন্য বাঁধাকে ক্ষয় করে সোজা পথে অগ্রসর হয়। 3 ভূমির ঢাল, শিলার প্রকৃতি, জলের পরিমাণ প্রভৃতির ওপর নদীর কাজ নির্ভর করে। হিমবাহের কার্য নির্ভর করে প্রধানত বরফের পরিমাণ ও শিলার প্রকৃতির ওপর। 4 নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি অমসৃণ হয়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপগুলি সাধারণত মসৃণ হয়। 5 নদীর গতি দ্রুত। অর্থাৎ নদী, উপত্যকা বরাবর প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। হিমবাহের গতি মন্থর, খালি চোখে হিমবাহের গতি বা প্রবাহ বোঝা যায় না। 6 পরিবাহিত বস্তুকণার আয়তন ও আক

ক্রেভাস

 ক্রেভাস                বিশালায়তন হিমবাহের অংশ খাড়া ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নামতে থাকলে টানের ফলে হিমবাহের ওই অংশে অসংখ্য আড়াআড়ি ও লম্বালম্বি ফাটলের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের গায়ে ওই ফাটলগুলিকে ক্রেভাস বলে।

বার্গস্রুন্ড

বার্গস্রুন্ড             পার্বত্য হিমবাহ মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচে নামার সময় পর্বতগাত্র থেকে ফাটলের মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে বরফাবৃত ঢালু পর্বতগাত্র ও হিমবাহের মধ্যে যে ফাটল বা ফাঁকের সৃষ্টি হয় তাকে বার্গস্রুন্ড বলে।

ক্র্যাগ ও টেল

ক্র্যাগ ও টেল                  হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে নানারকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ক্র্যাগ ও টেল হল তাদের মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ। হিমবাহের প্রবাহপথে কঠিন শিলার ঠিক পিছনে কোমল শিলা অবস্থান করলে কোমল শিলা সরাসরি হিমবাহের ক্ষয়কার্যের হাত থেকে রক্ষা পায়। এর ফলে কঠিন শিলা প্রথমে অসমতল স্তূপ আকারে অবস্থান করে এবং তার পিছনে কোমল শিলা সরু লেজের আকারে অবস্থান করে। সামনের এইরকম কঠিন শিলাস্তূপকে ক্র্যাগ এবং পেছনের লেজের মতো ঢালযুক্ত কোমল শিলাগঠিত অংশটিকে টেল বলে।

অ্যারেৎ বা এরিটি

          এক কথায় অ্যারেৎ হল হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া, পাশাপাশি দুটি সার্কের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ পাঁচিলের মতো শৈলশিরা। পার্বত্য হিমবাহের অত্যধিক চাপ ও ঘর্ষণের ফলে উপত্যকার অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গর্তের সৃষ্টি হলে একে দেখতে অনেকটা হাতলযুক্ত ডেক চেয়ারের মতো হয়, এই রকম গর্তকে সার্ক বা করি হ্রদ বলে।

রসে মোতানে

রসে মোতানে ‘রসে মোতানে’ একটি ফরাসি শব্দ, যার অর্থ উঁচু ঢিবি। রসে মোতানে হল পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কাজের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।

ক্যানিয়ন

ক্যানিয়ন                 বৃষ্টিহীন মরুপ্রায় শুষ্ক অঞ্চলের ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলা হয়। শুষ্ক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত খুব কম হয় বলে নদীর দুই পাড় বিশেষ ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না। ফলে সংকীর্ণ নদী উপত্যকার (‘I’ আকৃতি) দু-পাড় প্রচণ্ড খাড়া থাকে। এছাড়া দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ার পর হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত হলে শুষ্ক অঞ্চলের নদীগুলি দ্রুত নিম্নক্ষয় করতে থাকে এবং আরও গভীর সংকীর্ণ উপত্যকার সৃষ্টি করে।

হিমবাহ

হিমবাহ               ‘হিমবাহ’ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল—‘হিম’—বরফ এবং ‘বাহ’—প্রবাহ, অর্থাৎ, হিমবাহ বলতে ‘বরফের প্রবাহ’ কে বোঝায়। কোনো নির্দিষ্ট খাত বা উপত্যকা বরাবর ভূমির ঢাল অনুসারে মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে খুব ধীরগতিতে চলমান বিশাল আয়তন বরফের স্তূপকে হিমবাহ বলে। বিখ্যাত হিমবাহ বিজ্ঞানী ফ্লিন্ট-এর মতে, “হিমবাহ হল এক বিশাল আকৃতির বরফের স্তূপ—যা প্রধানত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে এবং গতিশীল অবস্থায় রয়েছে অথবা কোনো একসময় গতিশীল ছিল।

লোয়েস সমভূমি

লোয়েস সমভূমি                   বায়ুর পরিবহনও অবক্ষেপণের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল লোয়েস সমভূমি। ‘লোয়েস’ কথাটির অর্থ ‘স্থানচ্যুত বস্তু’ বায়ুপ্রবাহিত অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা ‘লোয়েস’ নামে পরিচিত। ০.০৫ মিলিমিটার ব্যাসের সূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা প্রভৃতি বায়ুর সঙ্গে বহুদূর উড়ে যেতে পারে। অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে কোনো নীচু স্থানে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে। কখনও কখনও মরুভূমির বালি বায়ু দ্বারা অপসারিত হয়ে পার্শ্ববর্তী কোনো উর্বর কৃষিভূমিকে ক্রমশ ঢেকে ফেলে জমিটির উর্বরতা শক্তি নষ্ট করে দেয় এবং ধীরে ধীরে কৃষিভূমিটিকে মরুভূমি গ্রাস করে ফেলে।

বালিয়াড়ি

বালিয়াড়ি                       বায়ু গতিপথে বাধাপ্রাপ্ত (প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় প্রভৃতি) হলে মরু অঞ্চলে যে উঁচু, স্তূপাকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে বালিয়াড়ি বলে। বালিয়াড়ি প্রকৃতপক্ষে বালির পাহাড়, তবে বালিয়াড়ির উৎপত্তি সম্পর্কে ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ডের মতে, প্রকৃত বালিয়াড়ি হল একটি গতিশীল বালিয়াড়ি যার সৃষ্টির জন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার প্রয়োজন হয় না। মরুভূমি ছাড়া সমুদ্রোপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায় (যেমন–দিঘা বালিয়াড়ি)। তবে সমুদ্রোপকূলের বালিয়াড়ি সাধারণত আকারে ছোট হয়।

ফিয়র্ড

ফিয়র্ড                সমুদ্র উপকূল সংলগ্ন পার্বত্যভূমিতে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্টি হওয়া আংশিক জলপূর্ণ গিরিখাতকে ফিয়র্ড বলে। সাধারণত উচ্চ-অক্ষাংশে হিমবাহ উপত্যকার প্রান্তভাগে সমুদ্র অবস্থান করলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সমুদ্র উপকূলভাগ সমুদ্র সমতল অপেক্ষা অনেক গভীর খাত বা উপত্যকার সৃষ্টি করে। এইসব উপত্যকা জলমগ্ন হলে ফিয়র্ডের সৃষ্টি হয়।

সিফ্ বালিয়াড়ি

সিফ্ বালিয়াড়ি                    বায়ুর গতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে যে সমস্ত বালির স্তূপ সৃষ্টি হয়, তাদের অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে। অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ির মধ্যে যেগুলি আকারে বেশ সংকীর্ণ কিন্তু খুব লম্বা, তাদের সিফ্ বালিয়াড়ি বলে। স্থায়ী বালিয়াড়ির মধ্যভাগ বায়ুপ্রবাহের ফলে ভেঙে গিয়ে সিফ্ বা তির্যক বালিয়াড়ি গঠিত হয়। আরবি শব্দ ‘সিফ্’-এর অর্থ হল ‘তলোয়ার’–যার থেকে এই বালিয়াড়ির নামকরণ।

হিমানী সম্প্ৰপাত

হিমানী সম্প্ৰপাত           পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পার্বত্য অঞ্চলে তুষারক্ষেত্রের জমাট বাঁধা বরফ অত্যন্ত ধীরগতিতে পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে। সময় সময় পাহাড়ের ঢালে চলমান এইরকম হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ ভেঙে বিপুলবেগে নীচের দিকে পড়তে দেখা যায়, একে হিমানী সম্প্রপাত বলে।  

গিরিখাত

গিরিখাত               উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদী প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়। গতিবেগ বেশি হওয়ার জন্য নদীর পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয়ের পরিমাণ অধিক হয়। ফলে নদীর গভীরতা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। ফলে নদী ‘I’ বা ‘V’ আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে সোজা পথে অগ্রসর হয়। অধিক নিম্নক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট এইরূপ গভীর ও সংকীর্ণ নদী উপত্যকাকে গিরিখাত বলে।

মরুদ্যান বা ওয়েসিস

মরুদ্যান বা ওয়েসিস                  মরু অঞ্চলে অপসারণ বা অবনমন প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের ফলে মরুদ্যান সৃষ্টি হয়। বহুদিন ধরে মরুভূমির একটি নির্দিষ্ট স্থানের বালি প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে অপসারিত হলে অবনমিত গর্তের সৃষ্টি হয়। এইভাবে ক্রমাগত অপসারণ ক্রিয়া কার্যকর হলে গর্তের গভীরতা ভূগর্ভের ভৌমজলস্তরকে স্পর্শ করে। ফলে ভৌমজলস্তর ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং মরুভূমিতে স্থায়ী জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। জলাশয়কে কেন্দ্র করে কিছু স্বাভাবিক উদ্ভিদ, স্থায়ী বসতি ও চাষ আবাদের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আদিগন্ত ধু-ধু মরুভূমির মধ্যে সামান্য প্রাণের ছোঁয়া ও সবুজের সমারোহ দেখা যায়। তাই একে মরুদ্যান বলে।

পেডিমেন্ট বা পাদদেশীয় সমভূমি

পেডিমেন্ট বা পাদদেশীয় সমভূমি            ‘পেডি’ শব্দটির অর্থ হল ‘পাদদেশ’ এবং ‘মন্ট’ কথাটির অর্থ ‘পর্বত বা পাহাড়’। অর্থাৎ , ‘পেডিমেন্ট’ বলতে বোঝায় ‘পর্বতের পাদদেশীয় ভূভাগ'।

গৌর

গৌর            গৌর হল বায়ুর ক্ষয়কাজের দ্বারা সৃষ্ট ভূমিরূপের এক অন্যতম নিদর্শন। বায়ুর গতিপথে কোনও কঠিন ও কোমল শিলায় গড়া শিলাস্তূপ অবস্থান করলে নীচের কোমল অংশে বায়ুর ক্ষয়কার্যের তীব্রতা বেশি হওয়ার জন্য শিলাস্তূপটির নীচের অংশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সরু স্তম্ভের মতো হয় এবং ওপরের কম ক্ষয়প্রাপ্ত কঠিন শিলাস্তরটি বিরাট আয়তন নিয়ে ব্যাঙের ছাতা বা স্তম্ভের মতো দাঁড়িয়ে থাকে৷ স্তম্ভাকৃতি এই রকম শিলাস্তূপকে গৌর বলে। আফ্রিকায় গৌরকে গারা (Gara) এবং জার্মানিতে পিলজফেলসেন (Pilzfelsen) বলা হয়।

হিমরেখা

হিমরেখা           মেরুপ্রদেশ ও উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলের তীব্র শৈত্যে, যে সীমারেখার ওপরে অত্যধিক শীতলতার জন্য সারা বছরই জল জমে বরফে পরিণত হয়ে থাকে এবং যে সীমারেখার নীচে উত্তাপে তুষার গলে যায়, সেই সীমারেখাকে হিমরেখা বলে। ভূবিজ্ঞানী মঙ্খাউসের মতে, “সর্বদা বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলের নিম্নতম প্রান্তরেখাকে হিমরেখা বলে।” হিমরেখার ওপরে থাকে চিরতুষার ক্ষেত্র।

পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু

পলল ব্যজনী বা পলল শঙ্কু                     পর্বত্য অঞ্চল থেকে সমভূমিতে প্রবেশ করলে নদীর গতিপথের ঢাল হ্রাস পায়। ফলে নদীর ক্ষমতাও কমে যায়। উচ্চপ্রবাহের ক্ষয়িত পদার্থসমূহ (শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি) সমভূমিতে প্রবেশের মুখে পর্বতের পাদদেশে সঞ্চিত হয়ে শঙ্কু আকৃতির ভূমিরূপ গঠন করে। একে পলিশঙ্কু বলে। দেখতে হাত পাখার মতো হয় বলে একে পলল পাখা বা পলল ব্যজনীও বলে। 

মন্থকূপ

মন্থকূপ         নদীখাতের সঙ্গে নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডের সংঘর্ষের ফলে নদীখাতে যে গোলাকার ও মসৃণ গর্তের সৃষ্টি হয় তাকে মন্থকূপ বলে।

বার্খান

বার্খান             বায়ুর সঞ্চয়কাজের ফলে যেসব ভূমিরূপ গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে বালিয়াড়ি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।বালিয়াড়ির অন্যতম একটি বিশেষ শ্রেণি হল বাৰ্খান বা তির্যক বালিয়াড়ি। ‘বাৰ্খান’একটি তুর্কি শব্দ, এর অর্থ হল ‘কিরঘিজ স্টেপস্’ অঞ্চলের বালিয়াড়ি। উষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের পথে আড়াআড়িভাবে গঠিত বালির স্তূপ বা বালিয়াড়িকে বাৰ্খান বলা হয়।

হিমশৈল

হিমশৈল                    উচ্চ-অক্ষাংশে অবস্থিত মহাদেশীয় হিমবাহ অনেক সময় সমুদ্র উপকূলভাগ পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। জলের ঊর্ধ্বচাপ, সমুদ্রস্রোত ও বায়ুপ্রবাহের ফলে হিমবাহের প্রান্তভাগের কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে সমুদ্র জলে ভাসতে ভাসতে এগিয়ে চলে। আমরা জানি, জল বরফে পরিণত হলে তার ঘনত্ব কমে এবং আয়তন বৃদ্ধি পায় এবং বরফ জলে ভাসতে থাকে। কিন্তু সমগ্র বরফের স্তূপের প্রায় ১/১০ অংশ জলের ওপরে এবং বাকি ৯/১০ অংশ জলের নীচে নিমজ্জিত অবস্থায় থাকে। সমুদ্রে ভাসমান এইরূপ বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে।

জুগ্যান বা জুইগেন

জুইগেন                  কখনো কখনো দেখা যায় যে, কোনো কোনো শিলাস্তূপের কঠিন ও কোমল শিলাস্তরগুলো ওপর-নিচে পরস্পরের সমান্তরালভাবে অবস্থান করে। প্রচণ্ড সূর্যতাপে এইসব উচ্চভূমিতে ফাটল সৃষ্টি হলে বায়ুর অবঘর্ষণের ফলে কঠিন শিলাস্তরগুলো অতি অল্প ক্ষয় পেয়ে টিলার মতো দাঁড়িয়ে থাকে এবং কোমল শিলাস্তরগুলো বেশি ক্ষয় পেয়ে ফাটল বরাবর লম্বা খাত বা গহ্বরের সৃষ্টি করে। এই রকম দুটো খাতের মধ্যে চ্যাপ্টা মাথা টিলার মতো যে ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তাকে জুগ্যান বা জুইগেন বলে।

ইয়ার্দাং

ইয়ার্দাং                মরু অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে যদি কঠিন ও কোমল শিলাস্তর পাশাপশি উল্লম্বভাবে অবস্থান করে তাহলে কোমল শিলাস্তর দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং কম ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়া কঠিন শিলাস্তর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে উঁচু প্রাচীরের আকারে দাঁড়িয়ে থাকে। এইরূপ কঠিন শিলা দ্বারা গঠিত সমান্তরাল প্রাচীরগুলিকে ইয়ার্দাং বলে।

আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন মধ্যে পার্থক্য

  আবহবিকার ও ক্ষয়ীভবন মধ্যে পার্থক্য Sl. No. আবহবিকার ক্ষয়ীভবন 1 আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান যেমন—উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, জলীয় বাষ্প, তুষারপাত ও বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান দ্বার শিলাসমূহের চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া বা বিয়োজনকে আবহবিকার বলে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি, যেমন—নদী, বায়ু, হিমবাহ, ইত্যাদি দ্বারা আবহবিকারপ্রাপ্ত চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহের অপসারণকে ক্ষয়ীভবন বলে। 2 আবহবিকারের ফলে মূল শিলার বৈশিষ্ট্যের (গঠন, আকৃতি, খনিজের আণবিক সজ্জা প্রভৃতি) পরিবর্তন ঘটে । ক্ষয়ীভবনের ফলে ভূমিরূপের পরিবর্তন সাধিত হয়। কিন্তু মূল শিলার বৈশিষ্ট্যের কোনো পরিবর্তন সাধন হয় না। 3 আবহবিকার কোনোভাবে ক্ষয়ীভবনের ওপর নির্ভরশীল নয়। ক্ষয়ীভবন সম্পূর্ণরূপে আবহবিকারের ওপর নির্ভরশীল। আবহবিকার প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে ক্ষয়ীভবন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে না। 4 আবহবিকারের ফলে চূর্ণবিচূর্ণ শিলাসমূহ শিলাস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল শিলাস্তরের ওপরেই অবস্থান করে। ক্ষয়ীভবনের ফলে আবহবিকার প্রাপ্ত শিলাচূর্ণ স্থানান্তরিত বা

গ্রাবরেখা

গ্রাবরেখা             হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, গ্রাবরেখা হল তার এক উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। পার্বত্য অঞ্চল দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার সময় ক্ষয় পাওয়া শিলাখণ্ড, নুড়ি, কাঁকর, বালি প্রভৃতি হিমবাহের সঙ্গে বয়ে চলে। এইসব বিচ্ছিন্ন ও ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাখণ্ডের কিছু অংশ হিমবাহের দু'পাশে, সামনে ও তলদেশে স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়। সঞ্চিত এই সব শিলাস্তূপকে গ্রাবরেখা বলে।

ঝুলন্ত উপত্যকা

ঝুলন্ত উপত্যকা           উচ্চপার্বত্য অঞ্চলে একটি প্রধান হিমবাহের সাথে এক বা একাধিক উপহিমবাহ এসে মিলিত হয়। প্রধান হিমবাহে বরফের পরিমাণ বেশি থাকার ফলে হিমবাহটি অধিক পরিমাণে ক্ষয়কার্য করে এবং হিমবাহ উপত্যকাটি গভীর হয়। অপরপক্ষে, উপহিমবাহগুলি ছোটো হওয়ায় এতে বরফের পরিমাণ কম থাকে এবং এদের উপত্যকার গভীরতাও কম হয়। পরবর্তীকালে হিমবাহ সরে গেলে শুধুমাত্র হিমবাহ উপত্যকাগুলি পড়ে থাকে। এই হিমবাহ উপত্যকাগুলিকে (প্রধান ও উপহিমবাহ উপত্যকা) সামগ্রিকভাবে দেখলে মনে হয় যে, মূল হিমবাহ উপত্যকাটির ওপর উপহিমবাহ উপত্যকাগুলি যেন ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। তাই এদের ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।

করি বা সার্ক

করি বা সার্ক             উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যে অবতল উপত্যকার সৃষ্টি হয় তা দেখতে অনেকটা ‘হাতলবিহীন আরামকেদারার’ মতো বা ‘চামচের খাতের’ মতো হয়। এই ধরনের আকৃতিবিশিষ্ট ভূমিরূপকে ফরাসিতে সার্ক এবং ইংরেজিতে করি বলে। এককথায় সার্ক হল হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া হাতলযুক্ত ডেক চেয়ারের মতো, মাঝখানে গর্ত এমন ভূমিরূপ। উপত্যকা হিমবাহের উৎসক্ষেত্রে ক্ষয়কাজের ফলে সার্কের সৃষ্টি হয়।

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ

অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ           মধ্য ও নিম্ন প্রবাহে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায়। ফলে নদীর ক্ষমতাও কমে যায়। এইসময় নদী বাধার সম্মুখীন হলে সোজা পথে অগ্রসর না হয়ে আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়। আঁকাবাঁকা পথে চলতে গিয়ে নদী প্রবাহের বাইরের দিকে অবতল পাড়টিকে ক্ষয় করে। আর ক্ষয়িত পদার্থসমূহ বাঁকের ভিতরে উত্তল পাড়ে জমা হতে থাকে। ফলে নদীর বাঁক ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। নদীর বাঁক যত বৃদ্ধি পায় ততই পরস্পরের নিকট এগিয়ে আসে। ক্ষয়কার্য আরও বৃদ্ধি পেলে দুটি বাঁক পৃথককারী বাঁক গ্রীবা (দুটি নদী বাঁকের মধ্যবর্তী সংকীর্ণ ভূমি) অংশটি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এর ফলে নদী আর বাঁকা পথে প্রবাহিত না হয়ে সোজা সরল পথে প্রবাহিত হয়। মধ্যবর্তী নদীবাঁকটি মূল নদী হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে হ্রদের আকার ধারণ করে। এই হ্রদগুলি দেখতে অনেকটা ঘোড়ার ক্ষুরের মতো হয় বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বা Oxbow Lake বলে।

অবঘর্ষ

অবঘর্ষ            অবঘর্ষ হল এমন একটি ক্ষয়সাধনকারী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি যেমন—নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি ক্ষয়কার্য করে থাকে।  (i) নদী দ্বারা সংঘটিত অবঘর্ষ—  এই প্রক্রিয়ায় উচ্চগতিতে নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে নদীখাতের ঘর্ষণের ফলে নদীখাত ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং নদীখাতে ছোটোছোটো গর্তের (মন্থকূপ) সৃষ্টি হয়। নদীখাতের এইরূপ ক্ষয়কে অবঘর্ষ বলে।

প্লাবনভূমি

প্লাবনভূমি           নিম্ন প্রবাহে সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার সময় নদীর ক্ষমতা হ্রাস পায়।  উচ্চপ্রবাহ থেকে আগত ক্ষয়িত পদার্থসমূহ এই সময় নদী উপত্যকায় সঞ্চিত হয়, ফলে নদীর গভীরতা হ্রাস পায়। এইসময় উচ্চ বা মধ্যপ্রবাহে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে নদীখাতে জলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অতিরিক্ত জল ওই অগভীর নদীখাতের ভিতর দিয়ে নিষ্কাশিত হতে পারে না। এর ফলে নদীর জল নদীর খাত ছাপিয়ে পার্শ্ববর্তী উপত্যকা অঞ্চলকে প্লাবিত করে। প্লাবনের জলের সঙ্গে আগত নুড়ি, কাঁকর, বালি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জমা হয়। এইভাবে প্রতি বছর প্লাবনের ফলে নদীর দু-পাশের অসমান  জ মিতে পলি সঞ্চিত হয়ে সমভূমি গঠিত হয় বলে একে প্লাবনভূমি বলে। নবীন পলি দ্বারা গঠিত প্লাবনভূমিকে পাঞ্জাবে ‘বেট’ ও উত্তরপ্রদেশে ‘খাদার’ বলে।

বদ্বীপ

বদ্বীপ                 নদীর নিম্নপ্রবাহে, মোহানার কাছে যেখানে নদী সমুদ্রে এসে মেশে সেখানে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যায়। তাই নদীর সঙ্গে আগত ক্ষয়িত পদার্থসমূহ নদীবক্ষে সঞ্চিত হয়। এ ছাড়া নদীবাহিত পলিসমূহ সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে এসে দ্রুত থিতিয়ে পড়ে। এইভাবে সঞ্চয়ের ফলে নদী মোহানায় মাত্রাহীন বাংলা ‘ব’ অক্ষরের মতো বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (Δ)-র মতো দ্বীপের সৃষ্টি হয়। একে বদ্বীপ বলে। 

স্বাভাবিক বাঁধ

স্বাভাবিক বাঁধ           নিম্নপ্রবাহে নদীর গতিবেগ একেবারে কমে যাওয়ায় নদী তার বোঝা (বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড, শিলাচূর্ণ, বালি, পলি প্রভৃতি) বইতে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং নদীবাহিত বিভিন্ন পদার্থ নদীর দু'তীরে অবক্ষেপণের মাধ্যমে সঞ্চিত হয়। দীর্ঘকাল ধরে পলিসঞ্চয়ের ফলে নদীর দুই তীরবর্তী স্থান পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের তুলনায় উঁচু হয়ে যায়৷ এইভাবে নদীর দুই পাশে পলি সঞ্চয়ের ফলে প্রাকৃতিকভাবে বাঁধের আকারে যে দীর্ঘ ভূমির সৃষ্টি হয়, তাকে স্বাভাবিক বাঁধ বলা হয়। কলকাতা শহর গঙ্গার স্বাভাবিক বাঁধের ওপর অবস্থিত।

জলপ্রপাত

জলপ্রপাত          নদীর গতিপথে খাড়া ঢালযুক্ত অংশে পতনশীল জলধারাকেই জলপ্রপাত বলে। পার্বত্য প্রবাহে নদীর গতিপথে আড়াআড়িভাবে কোনো কঠিন শিলা থাকলে, সেই কঠিন শিলা পাশের কোমল শিলা থেকে কম ক্ষয় পাওয়ায় উঁচু হয়ে থাকে এবং নদীস্রোত সেই খাড়া ঢাল থেকে বিপুল বেগে নীচের কোমল শিলায় পড়ে জলপ্রপাতের সৃষ্টি করে। নদীর গতিপথের যে অংশে জলপ্রপাতের জলধারা সজোরে এসে পড়ার ফলে মন্থকূপের সৃষ্টি হয় তাকে প্রপাতকূপ বলে।

হিমদ্রোণি বা হিমখাত (Glacial trough) বা ‘U’ আকৃতির উপত্যকা

হিমদ্রোণি বা হিমখাত (Glacial trough) বা ‘U’ আকৃতির উপত্যকা               উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কাজের ফলে সৃষ্টি হওয়া অন্যতম এক ভূমিরূপ হল হিমদ্রোণী। হিমবাহ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় যেখানে হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় সমানভাবে হওয়ার ফলে পার্বত্য উপত্যকাটির আকৃতি ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়ে যায়, একে ‘U’ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী বলে।

ড্রামলিন

ড্রামলিন          হিমবাহের সঞ্চয় কাজের ফলে যেসব ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, ড্রামলিন হল তার একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। হিমবাহ অধ্যুষিত অঞ্চলে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দে আবৃত চামচ বা টিলা আকৃতির স্থানকে ড্রামলিন বলা হয়। হিমবাহ গলে গেলে তার নীচে হিমবাহের সঙ্গে বয়ে আনা বালি ও কাদার সঙ্গে বিভিন্ন আকৃতির নুড়ি-পাথর অবক্ষেপ হিসাবে সঞ্চিত হলে তাদের একসঙ্গে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলা হয়। হিমকর্দে আবৃত অঞ্চলের মধ্যে ছোটো ছোটো নুড়ি সারিবদ্ধভাবে জমে উল্টানো নৌকা বা আধখানা ডিম বা চামচের মতো আকৃতির হয়ে টিলার আকার ধারণ করলে তাকে ড্রামলিন বলা হয়। 

যান্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য

  যান্ত্রিক আবহবিকার ও রাসায়নিক আবহবিকারের মধ্যে পার্থক্য Sl. No. যান্ত্রিক আবহবিকার রাসায়নিক আবহবিকার 1 বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে শিলাস্তর যখন ফেটে ছোটো ছোটো খন্ড বা চূর্ণে পরিণত হয় মূল শিলার ওপরে অবস্থান করে তখন তাকে যান্ত্রিক আবহবিকার বলে। নানান রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় শিলা বিয়োজিত হওয়ার ঘটনাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে। 2 যান্ত্রিক আবহবিকারের ফলে শিলার শুধুমাত্র ভৌত পরিবর্তন ঘটে। শিলা গঠনকারী খনিজের রাসায়নিক ধর্মের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। রাসায়নিক আবহবিকারের ফলে শিলার মধ্যে অবস্থিত খনিজগুলি বিয়োজিত হয়। ফলে শিলার ভৌত ও রাসায়নিক উভয় ধর্মেরই পরিবর্তন ঘটে। 3 উষ্ণ, মরু ও মরুপ্রায় অঞ্চল এবং শীতল পার্বত্য অঞ্চলে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি মাত্রায় সংঘটিত হয়। আর্দ্র ক্রান্তীয় ও নিরক্ষীয় অঞ্চলে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি পরিমাণে সংঘটিত হয়। 4 যান্ত্রিক আবহবিকার অনেক সময় সশব্দে ঘটে থাকে। রাসায়নিক আবহবিকার নিঃশব্দে ঘটে থাকে। 5 ভূমিরূপ গঠন ও পরিবর্তনের ক

কীভাবে মাটির উৎপত্তি হয়? মাটির উৎপত্তি কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে? উৎপত্তি অনুসারে মাটির শ্রেণিবিভাগ

মাটি           ভূতত্ত্ববিদরা মনে করেন যে, সূর্য থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর পৃথিবী প্রথমে গ্যাসীয় বা বায়বীয় অবস্থায় ছিল। পরে তাপ বিকিরণের ফলে পৃথিবী তরল অবস্থায় আসে এবং ক্রমাগত তাপ বিকিরণের ফলে ঠাণ্ডা হয়ে শক্ত পিণ্ডে পরিণত হয়। এই শক্ত পিণ্ডকে শিলা বলে।  প্রাকৃতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ার দ্বারা কঠিন শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে অবশেষে মাটিতে পরিণত হয়। অর্থাৎ,  প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা উৎপন্ন শিলাচূর্ণ, খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থের মিশ্রণে সৃষ্ট যে শিথিল ও নরম স্তর ভূত্বকের ওপর অবস্থান করে, তাকে মাটি বলে।আসলে চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া শিলার সঙ্গে জৈব পদার্থ মিশ্রিত হয়েই প্রকৃত মাটি সৃষ্টি হয়। ভূপৃষ্ঠে মাটি সৃষ্টির পদ্ধতিগুলিকে প্রধানত দু ভাগে ভাগ করা যেতে পারে, 

রেগোলিথ কী?

রেগোলিথ কী?                         রেগোলিথ হল মৃত্তিকাময় এক ধরনের শিথিল শিলাচূর্ণ। আবহবিকারের ফলে উৎপন্ন বিভিন্ন আকার ও আয়তনের শিলাচূর্ণ প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা অন্যত্র অপসারিত না হয়ে মূল শিলাস্তরের ওপর সঞ্চিত হতে থাকে। ক্রমাগত সঞ্চয়ের ফলে শিলাচূর্ণের পুরু আস্তরণ সৃষ্টি হয়। একেই রেগোলিথ বলে। কালক্রমে রেগোলিথের সঙ্গে ব্যাকটেরিয়া ও হিউমাস যুক্ত হয়ে মাটি তৈরি হয়।                        রেগোলিথকেই মাটি সৃষ্টির প্রাথমিক অবস্থা বলা যেতে পারে। কালক্রমে বিভিন্ন ধরনের জৈবিক, রাসায়নিক এবং জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রেগোলিথের প্রাথমিক উপাদানগুলি বিশ্লিষ্ট ও স্তরীভূত হয়ে মাটির সৃষ্টি করে। সাধারণত গ্রানাইট শিলায় আবহবিকারের ফলে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলের শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে সুড়কির মতো এক ধরনের মৃত্তিকাময় ও লাল রঙের শিথিল শিলাচূর্ণ বা রেগোলিথের সৃষ্টি হয়। আরও পড়ুন:: ⚡ আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন - সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ ⚡ যান্ত্রিক আবহবিকার ⚡ রাসায়নিক আবহবিকার ⚡ জৈবিক আবহবিকার ⚡ জারণ বা অক্সিডেশন ⚡ অঙ্গারযোজন বা কার্বোনেশন ⚡ শল্কমোচন বা এক্সফোলিয়েশন ⚡

পিণ্ডবিশরণ বা চৌকাকার বিচূর্ণীভবন

পিণ্ডবিশরণ বা চৌকাকার বিচূর্ণীভবন               উষ্ণতার পার্থক্যে যান্ত্রিক আবহবিকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হল পিণ্ডবিশরণ।   শিলা তাপের সুপরিবাহী নয়। এইজন্য মরু অঞ্চলের গাছপালাহীন উন্মুক্ত প্রান্তরে দিনের বেলা সূর্যের উত্তাপে শিলার বাইরের অংশ যতটা উষ্ণ হয়, ভিতরের অংশ ততটা উষ্ণ হয় না। আবার রাত্রিবেলা শিলার ওপরের অংশ যত তাড়াতাড়ি ঠাণ্ডা হয়, ভিতরের অংশ ততটা ঠাণ্ডা হয় না, ফলে দিনে বা রাত্রে শিলার ভিতরের ও বাইরের অংশের উষ্ণতার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য ঘটে। উষ্ণতার এই তারতম্যের ফলে শিলাস্তরে ক্রমাগত প্রসারণ ও সংকোচন হয়।                 শিলাস্তর যেহেতু তাপের কুপরিবাহী সেহেতু মরু অঞ্চলে দিনের বেলায় শিলাস্তরের উপরিভাগ উত্তপ্ত হয়ে যতটা প্রসারিত হয় অভ্যন্তরভাগের শিলাস্তর অতটা উত্তপ্ত হয়ে প্রসারিত হয় না। ফলে শিলাস্তরের মধ্যে পীড়নের সৃষ্টি হয়। পীড়নের সীমা মাত্রা অতিক্রম করলে শিলায় কতকগুলি অনুভূমিক ও উল্লম্ব ফাটলের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে এই ফাটল-রেখা বরাবর উপরের শিলা স্তরটি নিম্ন শিলাস্তর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। উপরের বিচ্ছিন্ন হওয়া শিলাস্তরটি দেখতে অনেকগুলি বর্গক্ষেত্র বা আ

ক্ষুদ্রকণা বিশরণ

ক্ষুদ্রকণা বিশরণ                    যেসব শিলা বিভিন্ন রকমের খনিজ পদার্থে গঠিত, সেইসব বিষম গুণসম্পন্ন ও বড়ো দানাযুক্ত শিলাগুলো ঠাণ্ডায় বা গরমে সমানভাবে সংকুচিত বা প্রসারিত হতে পারে না। এর ফলে শিলাস্তরের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন টানের সৃষ্টি হয়, শিলার গঠন আলগা হয়ে যায় এবং তাতে শিলা হঠাৎ সশব্দে ফেটে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়—মনে হয় যেন বন্দুক থেকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে।                          শিলাগুলো ক্ষুদ্রক্ষুদ্র কণা আকারে ভেঙে পড়ে। মরু অঞ্চলে সাধারণত বিকেলের দিকে সূর্যাস্তের পরে এই শিলা ফাটার আওয়াজ পাওয়া যায়। উষ্ণতার তারতম্যের ফলে এইভাবে বিষম গুণসম্পন্ন শিলার চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাওয়াকে ক্ষুদ্রকণা বিশরণ বা প্রস্তর চূর্ণীকরণ বলে। এই প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হওয়া পাথরচূর্ণগুলো আয়তনে ছোটো হয়। পেরু ও মধ্য অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমিতে এইরূপ আবহবিকার দেখা যায়। আরও পড়ুন:: ⚡ আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন - সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ ⚡ যান্ত্রিক আবহবিকার ⚡ রাসায়নিক আবহবিকার ⚡ জৈবিক আবহবিকার ⚡ জারণ বা অক্সিডেশন ⚡ অঙ্গারযোজন বা কার্বোনেশন ⚡ শল্কমোচন বা এক্সফোলিয়েশন ⚡ তুষার খণ্ডীকরণ ⚡ দ্রবণ বা সলিউশন ⚡ হাইড্রেশ