নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও। অথবা, একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও। উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা: পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...
ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ
রাজা রামমোহন রায়ই প্রথম আধুনিক যুক্তিবাদী মনন ও ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গঠন ও সংস্কারমুক্ত ধর্মপ্রচারের কথা বলেন। এ ছাড়া পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রতি তাঁর সমর্থন ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে তাঁর রাজনৈতিক বিচার–বিশ্লেষণ তাঁকে ‘প্রথম আধুনিক মানুষ’ অভিধায় ভূষিত করেছে। এ প্রসঙ্গে রামমোহন রায়ের মৃত্যুশতবর্ষে (১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৮ ফেব্রুয়ারি), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক ইংরেজি প্রবন্ধে লিখেছিলেন, “রামমোহন তাঁর আমলের বিশ্বের সমস্ত মানুষের মধ্যে ছিলেন একমাত্র ব্যক্তি, যিনি সম্পূর্ণরূপে আধুনিক যুগের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরেছিলেন”।
রামমোহন রায়–ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ
(১) সমাজসংস্কারের প্রথম উদ্যোগের জন্য—
‘সতীদাহ’ প্রথা রোধের লক্ষ্যে রামমোহন রায় সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর সংবলিত এক আবেদনপত্র বড়োলাট উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের কাছে পাঠান। বেন্টিঙ্ক রামমোহনের আবেদনে সাড়া দিয়ে ১৭ নং রেগুলেশন (Regulation–XVII) জারি করে সতীদাহ প্রথা রদ করেন। এ ছাড়াও তিনি বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, কৌলীন্য প্রথা, জাতিভেদ প্রথা, কন্যাপণ, গঙ্গাসাগরে সন্তান বিসর্জন প্রভৃতি সামাজিক কু–প্রথাগুলির বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হন। সমাজে নারীজাতির সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেন।
(২) ধর্মসংস্কারের প্রথম উদ্যোগের জন্য—
হিন্দুধর্মকে সংস্কারমুক্ত করার জন্য রামমোহন আত্মীয় সভা (১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ) ও ব্রাহ্ম সভা (১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ) প্রতিষ্ঠা করেন। হিন্দুধর্মের গোঁড়ামি ও পৌত্তলিকতাবাদের বিরুদ্ধে আত্মীয় সভা প্রচার চালায় এবং ব্রাহ্ম সভা, একেশ্বরবাদ ও নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনার আদর্শ তুলে ধরে।
(৩) পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের প্রথম উদ্যোগের জন্য—
রামমোহন–ই প্রথম উপলব্ধি করেন, পাশ্চাত্যের শিক্ষা , জ্ঞান–বিজ্ঞান, সাহিত্য ভারতবাসীকে আধুনিক করে তুলতে পারে। রামমোহনের এই ভাবনার সঙ্গে তৎকালীন গভর্নর–জেনারেল বেন্টিঙ্কের ভাবনা মিলে যাওয়ায়, ব্রিটিশ–ভারতের শিক্ষানীতিকে পাশ্চাত্য শিক্ষার আলোকে পুনর্বিন্যস্ত করা হয়। রামমোহন এদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গণিত, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, রসায়ন, অস্থিবিদ্যা, পাশ্চাত্য দর্শন ইত্যাদি বিষয় যুক্ত করার দাবি জানান।
(৪) বিশ্বজনীন রাজনৈতিক ভাবনার জন্য—
রামমোহন সমকালীন ইউরোপের স্বনামধন্য রাজনৈতিক চিন্তাবিদ মন্তেস্কু, রুশো, ভলতেয়ার, টম পেইন, বেন্থাম প্রমুখের রাজনৈতিক ভাবনায় প্রভাবিত হন। বিশ্বের প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদের প্রতি তিনি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁর রাজনৈতিক ভাবনায় সমগ্র মানবসমাজ ছিল এক বিশাল পরিবার এবং তাদের মধ্যে শান্তি ও সৌহার্দ্যরক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি মনে করতেন।
🔗🔗🔗
Read More ::
Comments
Post a Comment