নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও। অথবা, একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও। উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা: পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...
সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
উনিশ শতকে বাংলার নবজাগরণে যে গুটিকয়েক সংস্কারক উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে গেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। প্রচলিত অর্থে একজন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত হয়েও সমাজ সচেতন ও মানবতাবাদী বিদ্যাসাগর ছিলেন বঙ্গীয় নবজাগরণের এক জ্বলন্ত প্রতিমূর্তি। বাংলাদেশে শিক্ষা বিস্তার ও সমাজ সংস্কারের কাজে তাঁর ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
সংস্কার আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
(১) বহু বিবাহ ও বাল্যবিবাহ নিবর্তন এবং বিধবা বিবাহ প্রবর্তনের জন্য তিনি আন্দোলনে নামেন এবং বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি নিয়ে তিনি তাঁর মতামতের যৌক্তিকতা প্রদর্শন করেন। মূলত তাঁর আন্দোলনের ফলে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বিধবা বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। কেবল বিধবা বিবাহ আইন পাশ নয়—নিজ খরচে তিনি বেশ কিছু বিধবার বিবাহ দেন এমনকি তিনি নিজ পুত্রেরও এক বিধবার সঙ্গে বিবাহ দেন।
(২) নারী–শিক্ষার প্রসারে—
(i) নারীশিক্ষার পথিকৃৎ বিদ্যাসাগর জন এলিয়ট ড্রিঙ্ক ওয়াটার বেথুনের সাহায্য নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৪৯ খ্রি.) হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় (এখনকার বেথুন স্কুল)।
(ii) তিনি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় বাংলার বিভিন্ন জেলায় (হুগলিতে ২৩ টি, বর্ধমানে ১১ টি, মেদিনীপুরে ৩ টি, নদিয়ায় ১ টি) মোট ৩৮ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেগুলিতে প্রায় ১৩০০ জন ছাত্রী পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছিল।
(iii) তিনি মায়ের স্মৃতিরক্ষার উদ্দেশ্যে নিজের জন্মস্থানে বীরসিংহ গ্রামে ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন (১৮৯০ খ্রি.)।
নারী শিক্ষা বিস্তারের কাজেও তিনি এক উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। বাংলার নারীমুক্তির ইতিহাসে মানবতাবাদী বিদ্যাসাগর এক অনন্য ব্যক্তিত্ব।
(৩) শিক্ষাসংস্কারক হিসেবে—
কেবল নারীশিক্ষা নয়—সাধারণ শিক্ষা সম্পর্কেও তিনি প্রবল উৎসাহী ছিলেন। ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ নিযুক্ত হয়ে তিনি শিক্ষা সংস্কারে ব্রতী হন। পূর্বে কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানরাই সংস্কৃত কলেজের ছাত্র হতে পারত। বিদ্যাসাগর এই প্রথা রদ করে সংস্কৃত কলেজের দ্বার সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন। পূর্বে অধ্যাপকদের কলেজে আসা যাওয়া ও অধ্যাপনার ব্যাপারে কোনো নিয়ম কানুন ছিল না। তাঁরা যখন খুশি আসতেন ও চলে যেতেন। বিদ্যাসাগর সেখানে নিয়ম শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার প্রবর্তন করেন। পূর্বে সংস্কৃত কলেজে হিন্দু তিথি ও শুভদিন অনুসারে ছুটি দেওয়া হত। বিদ্যাসাগর সে প্রথা তুলে দিয়ে রবিবার ছুটির নিয়ম প্রবর্তন করেন।
(৪) আধুনিক পাঠক্রম প্রণয়নে—
সংস্কৃত কলেজের পাঠ্যক্রমে তিনি ব্যাপক পরিবর্তন ঘটান। ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। সংস্কৃত পণ্ডিত হয়েও তিনি সাংখ্য ও বেদান্তকে ‘ভ্রান্তদর্শন’ বলে অভিহিত করে পাঠ্যসূচী থেকে বাদ দেন। মিল–এর তর্কশাস্ত্র পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত করেন। সংস্কৃত ব্যাকরণ হিসেবে ‘মুগ্ধবোধ’ অসম্পূর্ণ ও ভ্রান্ত বলে তিনি তা বাতিল করেন এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে সহজে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য ‘সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা’ ও ‘ব্যাকরণ কৌমুদী’ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে বর্ণমালা, কথামালা, বোধোদয় ইত্যাদি পাঠ্যপুস্তক রচনার পাশাপাশি তিনি পাটিগণিত, জ্যামিতি, নীতিবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, শারীরবিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়কে সংস্কৃত কলেজের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেন।
(৫) উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিতে—
জনশিক্ষা বিস্তারের কাজেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে, শিক্ষাই মানুষের মধ্যেকার অন্ধকার দূর করে মনুষ্যত্বে পৌঁছে দেয়। লর্ড হার্ডিঞ্জের সহযোগিতায় তিনি বাংলার বিভিন্ন স্থানে, গ্রামাঞ্চলে বহু বিদ্যালয় স্থাপন করেন। এগুলির মধ্যে ৩৩ টি স্থায়ী হয়। বাংলার বিভিন্ন জেলায় তিনি ২০ টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির মধ্যে অনেকগুলিই তিনি নিজ ব্যয়ে চালাতেন। তাঁর অন্যতম কীর্তি হল মেট্রোপলিটন কলেজ প্রতিষ্ঠা। বর্তমানে এর নাম ‘বিদ্যাসাগর কলেজ’। এর মাধ্যমে তিনি উচ্চ শিক্ষাকে সাধারণ মধ্যবিত্তদের কাছে পৌঁছে দেন।
🔗🔗🔗
Read More ::
Comments
Post a Comment