মেহেরগড় সভ্যতার অবস্থান ও কালসীমা (Location and Chronology of the Mehrgarh Civilization)
১. অবস্থান (Location)
মেহেরগড় সভ্যতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নিওলিথিক (নব্যপ্রস্তর যুগ) কেন্দ্র, যা দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম কৃষিভিত্তিক জনবসতিগুলির মধ্যে অন্যতম।
আবিষ্কার: ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি প্রত্ন-বিজ্ঞানী জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ (Jean-François Jarrige) এবং তাঁর দল বালুচিস্তানের বোলান নদীর তীরে এই সভ্যতা আবিষ্কার করেন।
ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান: এটি বর্তমান পাকিস্তানের বালুচিস্তান (Baluchistan) প্রদেশের কাচ্চি (Kachi) সমভূমিতে, বোলান নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি সিন্ধু উপত্যকার পশ্চিমে, ইন্দো-ইরান মালভূমির প্রবেশদ্বারে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে।
ব্যাপ্তি ও কেন্দ্রসমূহ: মূল মেহেরগড় কেন্দ্রটি প্রায় ২০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার সুবিধার জন্য এই কেন্দ্রটিকে এম. আর. ১ (MR1), এম. আর. ২ (MR2), এম. আর. ৩ (MR3) প্রভৃতি অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে।
সন্নিহিত কেন্দ্র: মেহেরগড়ের পাশাপাশি এই সভ্যতার সমকালীন বা পরবর্তী নিদর্শন নৌসেরা (Nausharo) এবং পিরাক (Pirak) নামক স্থানগুলিতেও আবিষ্কৃত হয়েছে, যা এই সভ্যতার একটি বৃহৎ অঞ্চলের উপর প্রভাবকে নির্দেশ করে।
২. কালসীমা বা সময়কাল (Chronology or Time Span)
মেহেরগড় সভ্যতার সময়কাল প্রায় ৫০০০ বছরেরও বেশি বিস্তৃত, যা আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এই দীর্ঘ সময়কালকে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের পরিবর্তনের ভিত্তিতে বিভিন্ন পর্বে বিভক্ত করা হয়েছে। ফরাসি প্রত্ন-বিজ্ঞানী জাঁ ফ্রাঁসোয়া জারিজ এই কালসীমাকে মূলত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করলেও, আসকো পারপোলা (Asko Parpola)-সহ অন্যান্য গবেষকদের মতে একে আটটি স্বতন্ত্র পর্বে বিভক্ত করা হয়।
মেহেরগড় সভ্যতার আটটি পর্যায়ক্রমিক কালসীমা (Asko Parpola's Chronology):
| পর্ব (Period) | আনুমানিক সময়কাল (Approximate Time Span) | প্রধান বৈশিষ্ট্য (Key Features) |
| প্রথম পর্ব (I) | ৭,০০০ - ৬,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | প্রাচীনতম কৃষিকাজ (যব ও গম) ও পশুপালন, যাযাবর জীবন থেকে স্থায়ী বসতিতে পরিবর্তন। |
| দ্বিতীয় পর্ব (II) | ৬,০০০ - ৫,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | কৃষি ও পশুপালনে উন্নতি, মৃৎপাত্রের ব্যবহার শুরু। |
| তৃতীয় পর্ব (III) | ৫,০০০ - ৪,৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | মাটির তৈরি বাড়ি, উন্নত মৃৎশিল্প ও হস্তশিল্প। |
| চতুর্থ পর্ব (IV) | ৪,৩০০ - ৩,৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | তামার ব্যবহার বৃদ্ধি, প্রাক্-হরপ্পা (Pre-Harappan) সংস্কৃতির সূত্রপাত। |
| পঞ্চম পর্ব (V) | ৩,৮০০ - ৩,২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | দ্রুত নগরায়ণ, বাণিজ্য ও যোগাযোগের বিস্তার। |
| ষষ্ঠ পর্ব (VI) | ৩,২০০ - ২,৯০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | আদি হরপ্পা (Early Harappan) যুগের বৈশিষ্ট্যসমূহ স্পষ্ট। |
| সপ্তম পর্ব (VII) | ২,৯০০ - ২,৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | উন্নত শহর পরিকল্পনা, হরপ্পা সভ্যতার সমরূপতা। |
| অষ্টম পর্ব (VIII) | ২,৬০০ - ১,৮০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ | হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে সরাসরি সংযোগ ও পরবর্তীতে মেহেরগড়ের গুরুত্ব হ্রাস। |
গুরুত্ব (Significance)
মেহেরগড় সভ্যতাকে হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এর দীর্ঘস্থায়ী ও সুশৃঙ্খল বিকাশ দক্ষিণ এশিয়ায় কৃষিকাজের সূচনা, স্থায়ী বসতি স্থাপন এবং ব্রোঞ্জ যুগের নগর সভ্যতার উত্থানের পথ প্রস্তুত করেছিল।

Comments
Post a Comment