Skip to main content

সাম্প্রতিক পোস্ট

প্রাচীন ভারত ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট (Ancient India and Geographical Context) - প্রশ্নোত্তর

প্রাচীন ভারত ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট (Ancient India and Geographical Context) - প্রশ্নোত্তর ১। ভারতবর্ষকে কে নৃতত্ত্বের যাদুঘর আখ্যা দিয়েছেন? উঃ। ভিনসেন্ট স্মিথ ভারতবর্ষকে 'নৃতত্ত্বের যাদুঘর' বলে আখ্যা দিয়েছেন। ২। দ্রাবিড় সভ্যতা ভারতের কোথায় প্রথম গড়ে ওঠে? উঃ। দ্রাবিড় সভ্যতা প্রথম গড়ে ওঠে দক্ষিণ ভারতে। ৩। 'নাডিক' নামে কারা পরিচিত? উঃ। আর্যরা 'নার্ডিক' নামে পরিচিত। ৪। ভারতের প্রচীনতম লিপি কোনটি? উঃ। ভারতের প্রাচীনতম লিপি হল সিন্ধু লিপি।

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

                   ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দের ২৪ শে জুলাই বীরভূম জেলার লাভপুর গ্রামে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। পিতা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাতা প্রভাবতী দেবী পূণ্যলগ্নে জন্ম দিয়েছিলেন এই বিশ্ববরেণ্য বাংলা সাহিত্যিকের।


            তারাশঙ্কর বাবু এখন আমাদের মধ্যে জীবিত না থাকলেও তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে সাহিত্য পিপাসু প্রতিটি বাঙালীর অন্তরে তিনি জীবিত আছেন। তাঁর নব নব সাহিত্যসৃষ্টির মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে উত্তর শরৎচন্দ্র যুগের তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী। শুধুমাত্র বাংলা বা বাঙালী নয়, তারাশঙ্কর বাবু জনপ্রিয়তা পেয়েছেন বাংলার বাইরে ভিন্ন প্রদেশের ভিন্নভাষাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের কাছেও।


         যৌবনে বিবেকানন্দ, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথের প্রভাব তারাশঙ্করের উপর পড়েছিল। তাই, জমিদার-পুত্র হয়েও তিনি জমিদার হতে চাননি। হয়েছিলেন সমাজসেবী, মানুষের বন্ধু। আর তা হতে চেয়েই শেষপর্যন্ত হয়ে গেলেন এক বিশিষ্ট সাহিত্যিক। চেনা জগতের জানা মানুষগুলাের সুখ-দুঃখ, প্রীতি-বিদ্বেষের কথা বাস্তবসম্মত করেই দেশ-কাল নিরপেক্ষ মানুষের কাছে তুলে ধরলেন। অভিজ্ঞতাই যে তাঁকে একাজে সহায়তা করেছে তা বলাই বাহুল্য। জীবনে মিশেছেন নানান শ্রেণীর মানুষের সঙ্গে। নিম্ন বর্ণের মানুষের সান্নিধ্যেও সময় কাটিয়েছেন। কাহার, দুলে, বাগদি, বেদে প্রভৃতি মানুষের জীবনচর্চার সঙ্গে তিনি পরিচিত ছিলেন। সেজন্যই তাঁর গল্পে উপন্যাসে তাদের চরিত্র চিত্রণ অত্যন্ত সজীব এবং বিশ্বাসযােগ্য হয়ে উঠেছে।


               তারাশঙ্করের জীবনদর্শন গড়ে উঠেছিল সক্রিয় রাজনীতি, বীরভূমের গ্রাম্য প্রকৃতি, শিক্ষিত রিয়েলিষ্টিক মনােভাব এবং তার-ই পাশাপাশি জমিদার বংশের ঐতিহ্য সচেতনাতাকে কেন্দ্র করে। নতুন যুগের শিক্ষাকে তিনি অস্বীকার করেননি কিন্তু রক্ষণশীল কিছু সংস্কার ও জমিদার বংশের অহংকারের প্রতি ছিল তার দুর্বলতা।


               তারাশঙ্করের আবির্ভাব কল্লোলের পাতায় ‘রসকলি’ গল্পের স্রষ্টা হিসাবে। কিন্তু পরে তিনি নিজের প্রতিভা ও স্বাতন্ত্র সম্বন্ধে সচেতন হন। রহস্যে ভরা মানব জীবনই যে তার লেখবার বিষয়, তা তিনি শীঘ্র উপলব্ধি করলেন। তাই তিনি ‘কল্লোল’-এর সংকীর্ণতার খােলস ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন মানব জীবনের অপার রহস্য উদঘাটনের জন্য নব সাহিত্যের, নব ঢঙের, নবীন কেতন উড়িয়ে। কল্লোলীয়দের সঙ্গে এখানেই তার মূলগত প্রভেদ। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় তার ‘বাংলা গল্প বিচিত্রা’র ‘পশু প্রেম, ধ্রুবতারা’ পরিচ্ছেদে বলেছেন— “যে কোনাে বড় শিল্পীই প্রেরণায় অঙ্কুরিত, সাধনায় পল্লবিত এবং একটি পূর্ণাঙ্গ জীবদর্শনের বিস্তৃত ক্ষেত্রে ফলবান....।”


                       তাঁর উপন্যাসে মুমূর্ষু সামন্ততান্ত্রিক ব্যক্তি, জীবন ও সমাজের ছবিটি অপূর্ব করুণায় ও মমতায় বর্ণিত হয়েছে। একটা যুগের অবসান হচ্ছে, আর একটা যুগ আসছে। পুরাতন গ্রামীণ জমিদারী আবহাওয়া চলে যাচ্ছে, আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে আসছে শিল্পপতির দল। যন্ত্রদানবের লম্বা-পা রাতারাতি গ্রাস করছে গ্রাম জনপদ। কারখানা আধুনিক ভাষায় শিল্প যার চিমনি থেকে নির্গত রাশিরাশি সভ্যতার ধোঁয়া গ্রামের সুনীল আকাশ, সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামলা প্রকৃতি আর প্রবহমান পবিত্র বাতাস ও জলকে মারছে বিষাক্ত ছােবল। পৃথিবীর এই আবিলতা ও মলিনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মলিনতা বাড়ছে আমাদের মনে, আমাদের ব্যবহারে, আমাদের আচার আচরণ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে। দিকভ্রষ্ট, পথভ্রষ্ট ও চরিত্রভ্রষ্ট নরনারী বিত্ত ও স্বাচ্ছন্দ্যের সন্ধানে গাঁয়ের রাঙা মাটির পথ ভুলে কারখানার কালিঝুলি মাখছে। নতুন যুগের শিক্ষাকে তিনি অস্বীকার করেননি অথচ রক্ষণশীল কিছু সংস্কার ও জমিদার বংশের অহংকারের প্রতি ছিল তাঁর দুর্বলতা। তারাশঙ্কর অসাধারণ দক্ষতার সঙ্গে সেই সামাজিক পরিবর্তন ও মূল্যবােধের পার্থক্য তাঁর লেখার মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। একদিকে তিনি নবজীবনের চিত্র এঁকেছেন, অন্যদিকে অজগাঁয়ের অতি সাধারণ শ্রেণীর বেদিয়া, সাঁওতাল, বাজিকর, বৈষ্ণব, আউল-বাউল প্রভৃতি রহস্যময় ব্যক্তিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মেলামেশা করে তাদের জীবনের যে পরিচয় তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেন, তা এতদিন আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে ছিল।


                এইসব সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথাই তারাশঙ্কর তাঁর গল্পে বলেছেন– পরম মমতায়, আর তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর গভীর প্রকৃতিচেতনা। স্মৃতিমেদুরতা, প্রকৃতিপ্রেম, বাস্তব বর্ণনা ও সততা তার গল্পগুলিকে সার্থক করে তুলেছে।


               তারাশঙ্করের প্রথম গল্প ‘রসকলি’ ‘কল্লোল’-এ প্রকাশিত হলেও কল্লোলের সঙ্গে তার মানসিকতা মেলেনি। ‘রসকলি’, ‘হারানাে সুর’ ও আরও দু একটি গল্প ‘কল্লোল’ ও ‘কালিকলম’-এ প্রকাশিত হলেও–তাঁর বেশিরভাগ গল্প প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গশ্রী’ ও ‘ভারতবর্ষ’ পত্রিকায়।


                তাঁর গল্প গ্রন্থ ৩৫ টি—গল্পসংখ্যা ১৯০। ‘ছলনাময়ী’, ‘জলসাঘর’, ‘রসকলি’, ‘তিন শূন্য’, ‘বেদিনী’, ‘হারানােসুর’, ‘স্থলপদ্ম’, ‘পৌষলক্ষ্মী’ ইত্যাদি উল্লেখযােগ্য গল্পসংকলন। তাঁর জনপ্রিয় উপন্যাসগুলি হল— ‘রাইকমল’ (১৯৩৪) ‘ধাত্রীদেবতা’ (১৯৩৯), ‘কালিন্দী’ (১৯৪০), ‘গণদেবতা’ (১৯৪২), ‘পঞ্চগ্রাম’ (১৯৪৪), ‘কবি’ (১৯৪৪), ‘অভিযান’ (১৯৪৬), ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ (১৯৪৭), ‘পদচিহ্ন’ (১৯৫০), ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ (১৯৫২), ‘আরােগ্য নিকেতন’ (১৯৫৩), ‘চাপাডাঙার বৌ’ (১৯৫৪), ‘বিচারক’ (১৯৫৭), ‘সপ্তপদী’ (১৯৫৭), ‘রাধা’ (১৯৫৮) ‘নিশিপদ্ম’ (১৯৬২), ‘গন্নাবেগম’ (১৯৬৫), ‘মণি বউদি’ (১৯৬৭) প্রভৃতি। লিখেছেন আরাে অনেক উপন্যাস, এবং অসংখ্য গল্প। উপন্যাসের সংখ্যা প্রায় ষাট। আধুনিককালে রচিত তাঁর আরও অনেক উপন্যাসে আধুনিক যুগের, বাংলাদেশের সমগ্র জীবনচিত্র অঙ্কিত হয়েছে।


                  বাংলা আঞ্চলিক উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ শিল্পী তারাশঙ্কর। তার অধিকাংশ উপন্যাসেই আঞ্চলিকতার উপাদান রয়েছে। তবে, ‘কবি’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’, ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ প্রভৃতি উপন্যাসে আঞ্চলিকতার লক্ষণ বেশি ফুটে উঠেছে। এই উপন্যাসগুলি যে পাঠকের মনােযােগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছে সে এদের আঞ্চলিকতার লক্ষণের জন্যই। আঞ্চলিক আখ্যানকে তারাশঙ্করই সর্বপ্রথম সর্বাঙ্গীন সাহিত্যের মহিমায় মণ্ডিত করে তুলেছেন।


                         ‘ধাত্রীদেবতা’র নায়ক শিবু লেখকেরই যেন প্রতিরূপ। সেও জমিদার পুত্র, কিন্তু জমিদার নয়, সমাজসেবী, রাজনীতি কর্মী বিপ্লবী। ব্যক্তিত্বময়ী পিসির শাসন আর স্নেহময়ী মায়ের প্রশ্রয় এই দুয়ের মধ্যে দিয়ে শিবুর বেড়ে ওঠা একটা বিশেষ অঞ্চলের পরিবেশেই। ‘কালিন্দী’, ‘গণদেবতা’, ‘পঞ্চগ্রাম’ এই তিনটি উপন্যাস যেন ধারাবাহিক আখ্যানের মতাে। ‘গণদেবতা’, আর ‘পঞ্চগ্রাম’-এ পরিবর্তনশীল গ্রাম্য সমাজ চিত্র ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। ‘কবি’ উপন্যাসে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে নিতাই কবিয়াল নামে এক দরিদ্র অন্ত্যজ স্বভাব কবির বৃত্তান্ত। ঠাকুর-ঝি আর ঝুমুর গায়িকা বসনের সঙ্গে নিতাইয়ের প্রণয় বৃত্তান্তই উপন্যাসটির মুখ্য উপজীব্য।


                    ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ থেকেই তারাশঙ্করের উপন্যাস নতুন পথে অগ্রসর হয়েছে। আঞ্চলিক উপন্যাসের যথার্থ রূপ এখান থেকেই ফুটে উঠতে থাকে। ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’ আর একটি স্মরণীয় আঞ্চলিক উপন্যাস। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’য় কাহার সম্প্রদায়ের জীবনচর্চা, যৌন জীবন, অর্থনীতি, ধর্ম বিশ্বাস, সংস্কার সব ফুটিয়ে তােলা হয়েছে। বনোয়ারী, করালী, পাখী, এরাই এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র। ‘নাগিনী কন্যার কাহিনী’র প্রধান চরিত্রগুলি বেদে। সাপুড়ে, সাপধরা, সাপের খেলা দেখানাে, সাপের বিষ বিক্রি করা—এই ধরনের কাজের মধ্যে দিয়েই তাদের জীবিকা এবং জীবন। লেখক নিখুঁতভাবে তাদের জীবনচিত্র অঙ্কন করেছেন। অন্তরঙ্গভাবে ঘনিষ্ঠ না হতে পারলে এভাবে কেউ একটা সমাজের ছবি ফুটিয়ে তুলতে পারেন না। তারাশঙ্করের অন্যান্য উপন্যাসগুলিও কোনাে না কোনাে দিক থেকে পাঠককে মুগ্ধ করে। সবগুলিকেই উৎকৃষ্ট বলা যাবে না, কিন্তু একজন মানুষ এত উপন্যাস ও গল্প যে লিখতে পারেন এটাও বিস্ময়কর।


                 তারাশঙ্করের গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে রাঢ়ের দরিদ্র মানুষ ও রাঢ় অঞ্চল। সমাজের একেবারে নীচুতলার মানুষেরা যেমন এসেছে তাঁর গল্পে তেমননি এসেছে ক্ষয়িষ্ণু জমিদার সম্প্রদায়ের মানুষেরা। তাঁর গল্পে সামাজিক বা রাজনৈতিক টানাপােড়েনও যেমন এসেছে, পাশাপাশি এসেছে বৈষ্ণব সমাজের যুক্তপ্রেম, প্রেমের আদর্শ ও বাস্তবের সংঘাত-প্রসঙ্গও। এসেছে ‘ডাইনি’র মতাে নিঃসঙ্গ, হতভাগিনী নারীর প্রসঙ্গ, ‘যাদুকরী’ বা ‘বেদেনী’র মতাে উদ্দাম প্রবৃত্তিসম্পন্ন নারীদের কথা আবার শ্মশানচারী, কন্যাহার কেনারাম চাটুজ্যের দুঃখও দৃষ্টি এড়ায়নি।

Comments

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘর্ণবাত-এর পার্থক্য

  ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘর্ণবাত-এর পার্থক্য Sl. No. ঘূর্ণবাত প্রতীপ ঘূর্ণবাত 1 ঘূর্ণবাতের নিম্নচাপ কেন্দ্রের চারিদিকে থাকে বায়ুর উচ্চচাপ বলয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উচ্চচাপ কেন্দ্রের চারিদিকে থাকে বায়ুর নিম্নচাপ বলয়। 2 নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ু উষ্ণ, হালকা ও ঊর্ধ্বগামী হয়। উচ্চচাপ কেন্দ্রে বায়ু শীতল, ভারী ও নিম্নগামী হয়। 3 ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে, ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল অল্প সময়ে প্রভাবিত হয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে না। 4 ঘূর্ণবাতের প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। বৃষ্টিপাত ও ঝড়-ঝঞ্ঝা ঘটে না। মাঝেমাঝে তুষারপাত ও কুয়াশার সৃষ্টি হয়৷ 5 ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ বিরাজ করে। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপ বিরাজ করে। 6 চারিদিক থেকে ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের দিকে বায়ু ছুটে আসে অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহ কেন্দ্রমুখী। প্রতীপ ঘূর্ণবাতে কেন...

ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য

  ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য Sl. No. ভরা কোটাল মরা কোটাল 1 চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ পৃথিবীর একই স্থানের উপর কার্যকরী হয়, ফলে ভরা কোটালের সৃষ্টি হয়। চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য সমকোণী অবস্থানে থাকলে পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পর বিপরীত ও বিরোধী হয়, ফলে মরা কোটালের সৃষ্টি হয়। 2 মানবজীবনের উপর ভরা কোটালে (নদী-মোহানা, নৌ-চলাচল, মাছ আহরণ ইত্যাদি)-র প্রভাব বেশি। মানবজীবনের উপর মরা কোটালের প্রভাব কম। 3 ভরা কোটাল হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে। মরা কোটাল হয় শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। 4 ভরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতল সবচেয়ে বেশী স্ফীত হয়। মরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতলের স্ফীতি সবচেয়ে কম হয়। 5 অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই পাশে একই সরলরেখায় চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করে। পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চাঁদের মাঝে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমীত...

মানব জীবনের ওপর পর্বতের প্রভাব উল্লেখ করো।

মানব জীবনের ওপর পর্বতের প্রভাব উল্লেখ করো। সমুদ্র সমতল থেকে অন্তত ১০০০ মিটারের বেশি উঁচু ও বহুদূর বিস্তৃত শিলাময় স্তূপ যার ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বন্ধুর, ভূমির ঢাল বেশ খাড়া এবং গিরিশৃঙ্গ ও উপত্যকা বর্তমান তাকে পর্বত বলে৷ খাড়াভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই পর্বত মানুষের জীবনকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। মানবজীবনে পর্বতের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবগুলি হল—

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।   অথবা,  একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।  অথবা,  নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও।             উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়।  এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়।  নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা:       পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...

স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর মধ্যে পার্থক্য

  স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর মধ্যে পার্থক্য Sl. No. স্থলবায়ু সমুদ্রবায়ু 1 স্থলবায়ু মূলত শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়। সমুদ্রবায়ু মূলত উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির হয়। 2 স্থলবায়ু প্রধানত রাত্রিবেলায় প্রবাহিত হয়। সমুদ্রবায়ু প্রধানত দিনেরবেলায় প্রবাহিত হয়। 3 সূর্যাস্তের পরবর্তী সময়ে এই বায়ুর প্রবাহ শুরু হয় ও রাত্রির শেষদিকে বায়ুপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায়। সূর্যোদয়ের পরবর্তী সময়ে এই বায়ুরপ্রবাহ শুরু হয় ও অপরাহ্নে বায়ুপ্রবাহে বেগ বৃদ্ধি পায়। 4 স্থলবায়ু উচ্চচাযুক্ত স্থলভাগ থেকে নিম্নচাপযুক্ত জলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এই কারণে স্থলবায়ুকে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। সমুদ্রবায়ু উচ্চচাপযুক্ত সমুদ্র থেকে নিম্নচাপযুক্ত স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এই কারণে সমুদ্রবায়ুকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর সঙ্গে তুলনা করা হয়। 5 স্থলভাগের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবার দরুন বেগ তুলনামূলক কম হয়ে থাকে। উন্মুক্ত সমুদ্রের ওপর দিয়ে দীর্ঘপথ প্রবাহিত হ...

ষাঁড়াষাঁড়ি বান

ষাঁড়াষাঁড়ি বান              বর্ষাকালে স্বাভাবিক কারণেই নদীতে জলের পরিমাণ ও বেগ বেশি থাকে। এই সময় জোয়ারের জল নদীর    মোহানায় প্রবেশ করলে জোয়ার ও নদীস্রোত—এই বিপরীতমুখী দুই স্রোতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর ফলে নদীর জল প্রবল শব্দ সহকারে প্রচণ্ড স্ফীত হয়ে ওঠে।  

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা ‘মেখলা’ শব্দের মানে হল ‘কোমর বন্ধনী’। অসংখ্য আগ্নেয়গিরি মেখলা বা কোমর বন্ধনীর আকারে কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যখন অবস্থান করে, তখন তাকে ‘আগ্নেয় মেখলা’ বলা হয়। ভূবিজ্ঞানীর মতে, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে ও এশীয় মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে পাত সীমায় ফাটল বরাবর অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে এবং আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়। 

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (১৮৭৮ খ্রি.)

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন প্রবর্তন সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর–জেনারেল লর্ড লিটন দেশীয় পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act, 1878) জারি করেন। পটভূমি ঊনবিংশ শতকে দেশীয় সংবাদপত্রগুলিতে সরকারি কর্মচারীদের অন্যায় আচরণ, অর্থনৈতিক শোষণ, দেশীয় সম্পদের বহির্গমন, দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ইত্যাদি নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। ইতিহাসবিদ এ.আর.দেশাইয়ের মতে, “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে সংবাদপত্র হল এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম”।

নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য

  নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য Sl. No. নদী উপত্যকা হিমবাহ উপত্যকা 1 মেরু প্রদেশের বরফাবৃত অঞ্চল এবং উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কেবলমাত্র বরফে ঢাকা উঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই হিমবাহ উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 2 পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা প্রধানত ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো হয়। হিমবাহ উপত্যকা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। 3 পার্বত্য ও উচ্চ সমভূমি অঞ্চলে নদী স্রোতের গতিবেগ প্রবল হয়, নিম্নভূমিতে নদী স্রোতের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। বেশিরভাগ সময়েই হিমবাহ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। 4 নদী উপত্যকা আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়। হিমবাহ উপত্যকা সোজা পথে অগ্রসর হয়। 5 সাধারণত নদী উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য বেশি হয়। হিমবাহ উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য কম হয়। 6 নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। ...

জাতীয়তাবাদের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান কী ?

          বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮–৯৪ খ্রি.) ছিলেন ঊনবিংশ শতকের অগ্রণী ঔপন্যাসিক ও প্রবন্ধকার। বঙ্কিমচন্দ্রের অধিকাংশ উপন্যাসের বিষয়বস্তু ছিল স্বদেশ ও দেশপ্রেম। বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্টি ভারতীয় জাতীয়তাবোধের বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিল। তাঁর ‘বন্দেমাতরম্’–মন্ত্র ছিল বিপ্লবীদের বীজমন্ত্র। অরবিন্দ ঘোষ তাই বঙ্কিমকে ‘জাতীয়তাবোধের ঋত্বিক’ বলেছেন।