নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও। অথবা, একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও। উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা: পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...
মানব শারীরবিদ্যা
প্রশ্ন:১
দেহের বিভিন্ন চেষ্টীয় কাজ এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে লঘুমস্তিষ্কের গুরুত্ব উল্লেখ করাে।
উত্তর:
দেহের বিভিন্ন চেষ্টীয় কাজ এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে লঘুমস্তিষ্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বাভাবিক চেষ্টীয় কাজের নিয়ন্ত্রণে সেরিব্রাল কর্টেক্সের সঙ্গে লঘুমস্তিষ্ক অংশগ্রহণ করে। লঘুমস্তিষ্ক মূলত চেষ্টীয় কাজের সময় নির্ধারণ করে এবং এটি ব্যক্তিকে মসৃণভাবে এক ধরনের গমন থেকে অন্য ধরনের গমনে যেতে সাহায্য করে। লঘুমস্তিস্ক পেশি সঞ্চালনের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং দ্রুত পেশি সঞ্চালনজনিত কাজ, যেমন— দৌড়ােনাে, টাইপ করা, পিয়ানাে বাজানাে ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। দেহভঙ্গি এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ— লঘুমস্তিষ্কের ফ্লোকুলোনােডুলার লােব অন্তঃকর্ণের ভেস্টিবিউলার যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেহভঙ্গি ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। ফ্লোকুলোনােডুলার লােব মূলত ঋজুভাবে দণ্ডায়মান থাকা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এই লােবে ক্ষত সৃষ্টি হলে ঋজুভাবে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হয় না। তা ছাড়া ফ্লোকুলোনােডুলার লােককে বিনষ্ট করলে দেহের ভারসাম্য ব্যাহত হয়। যদিও ঐচ্ছিক চলাফেরার কোনাে প্রকার অস্বাভাবিকতা লক্ষ করা যায় না।
প্রশ্ন:২
সুষুম্নাকাণ্ডের আবরণ গঠনকারী তিনটি পর্দা (মেনিনজেস) কী কী?
উত্তর:
(i) ডুরা ম্যাটার (Dura matter)—এটি সর্ববহিস্থ দৃঢ় পর্দা যা কশেরুকার সঙ্গে সংলগ্ন অবস্থায় থাকে।
(ii) অ্যারানয়েড ম্যাটার (Arachnoid matter)—এই পর্দা ডুরা ম্যাটার ও পায়া ম্যাটার-এর মাঝখানে থাকে।
(iii) পায়া ম্যাটার (Pia matter)—এটি সবচেয়ে ভিতরের পর্দা এবং স্নায়ুকলাকে ঘিরে অবস্থান করে।
প্রশ্ন:৩
সেরিব্রাল কর্টেক্সকে শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্থান বলা হয় কেন ?
উত্তর:
সেরিব্রাল কর্টেক্স বিভিন্ন অধঃকর্টিক্যাল (subcortical) কেন্দ্রের সঙ্গে নতুন সংযােগস্থাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন শর্তাধীন প্রতিবর্ত ক্রিয়া গঠন করে। যেমন—শর্তাধীন লালারস ক্ষরণ প্রতিবর্ত ক্রিয়াটি কর্টেক্সের স্বাদকেন্দ্র ও শ্রবণকেন্দ্র এবং অধঃকর্টিক্যাল কেন্দ্র মিলিতভাবে গঠন করে থাকে।
প্রশ্ন:৪
উচ্চতর মস্তিষ্ক স্তর হিসেবে গুরুমস্তিষ্কের গুরুত্ব লেখাে।
উত্তর:
গুরুমস্তিষ্ক মস্তিস্কের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গুরুমস্তিষ্ক প্রাত্যহিক বিভিন্ন অভিজ্ঞতার সংগ্রহশালা হিসেবে কাজ করে। অতীতের অভিজ্ঞতার অধিকাংশ স্মৃতিই এখানে সঞ্জিত হয়ে থাকে। তা ছাড়া চেষ্টীয় প্রতিক্রিয়ার বিভিন্ন খবরও এখানে সঞ্চিত থাকে। গুরুমস্তিস্কের সঙ্গে থ্যালামাস ও অন্যান্য নিম্নতর মস্তিস্ক স্তরের শারীরস্থানিক এবং কার্যকারী উভয় সম্পর্কই বিদ্যমান। গুরুমস্তিষ্কের প্রতিটি অঞ্চলের অনুরূপ অঞ্চল থ্যালামাসে আছে। তাই থ্যালামাসের খুব সামান্য অংশের সক্রিয়তা থেকে গুরুমস্তিষ্কের অনুরূপ ও বৃহৎ অঞ্চল সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া মধ্যমস্তিষ্কের কোনাে কোনাে অঞ্চলের সক্রিয়তা থেকে বিক্ষিপ্ত সংকেত গুরুমস্তিষ্কে প্রেরিত হয়; ফলে সমগ্র গুরুমস্তিষ্ক সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই প্রক্রিয়াকে জাগরণ প্রতিক্রিয়া (wakefullness) বলা হয়। অপরপক্ষে, যখন মধ্যমস্তিস্কের এই অঞ্চল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে তখন থ্যালামাস এবং গুরুমস্তকীয় অঞ্চল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, একে নিদ্রা (sleep) বলা হয়।
প্রশ্ন:৫
মস্তিষ্কের কোন্ অংশকে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলা হয় এবং কেন ?
উত্তর:
হাইপোথ্যালামাসকে স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র বলা হয়। কারণ এটি স্বতন্ত্র ও পরাস্বতন্ত্র উভয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্রিয়াকেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। হাইপােথ্যালামাসের পশ্চাদদেশীয় নিউক্লিয়াসসমূহ প্রধানত স্বতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিউক্লিয়াসগুলিকে উদ্দীপিত করলে রক্তচাপ, হৃৎস্পন্দন ও এপিনেফ্রিন ক্ষরণ বেড়ে যায়। তা ছাড়া রক্তবাহের সংকোচন ও তারারন্ধ্রের প্রসারণ হয় এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের বিচলন হ্রাস পায়। অপরপক্ষে, হাইপােথ্যালামাসের সম্মুখদেশীয় নিউক্লিয়াসসমূহ পরস্বতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্রের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব স্নায়ুকেন্দ্রে উদ্দীপনা প্রয়ােগ করলে তারারন্ধ্রের সংকোচন, রক্তচাপ হ্রাস, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন হারের হ্রাস ইত্যাদি প্রকাশ পায়।
প্রশ্ন:৬
স্নায়ুতন্ত্রের সংজ্ঞাবহ বিভাগের কার্যকারিতা লেখো।
উত্তর:
দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়স্থানের দ্বারা সংগৃহীত সংজ্ঞাবহ অভিজ্ঞতা বা সংবাদ সঙ্গে সঙ্গে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে নতুবা মস্তিস্কে সঞ্চিত থেকে ভবিষ্যতে দেহের প্রতিক্রিয়া কী হওয়া উচিত তা নির্ধারিত হতে সহায়তা করে। দেহের উপরিতলীয় ও গভীরের গ্রাহক থেকে সংজ্ঞাবহ অভিজ্ঞতা বা সংবাদ সুষুম্না স্নায়ুর মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে এবং সুষুম্নাকাণ্ডের সর্বস্তরে, মেডালা, পনস্ ও মধ্যমস্তিস্কের জালক পদার্থে, লঘুমস্তিস্কে , থ্যালামাসে এবং গুরুমস্তিষ্কের দেহগত অঞ্চলে প্রেরিত হয়। উদ্দীপনা এরপর মস্তিস্কের প্রায় সব অঞ্চলেই ছড়িয়ে পড়ে।
প্রশ্ন:৭
থ্যালামাসকে রিলেকেন্দ্র (relay station) বলার কারণ কী ?
উত্তর:
ঘ্রাণপ্রবাহ ছাড়া সবরকম সংজ্ঞাবহ স্নায়ুপ্রবাহ থ্যালামাসের মধ্য দিয়ে গুরুমস্তিষ্কে প্রবেশ করে। তাই থ্যালামাস গুরুমস্তিষ্কের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে। তাপ, চাপ, স্পর্শ, টান, কম্পন প্রভৃতি উদ্দীপনা পরিবহণকারী ঊর্ধ্বগামী স্নায়ুপথসমূহ মধ্যম সুষুম্নাগত ও ট্রাইজেমিনাল লেমনিসকাসের মাধ্যমে থ্যালামাসে প্রবেশ করে এবং থ্যালামাসের স্নায়ুকেন্দ্রে স্নায়ুসন্নিধি গঠন করে। থ্যালামাস থেকে উৎপন্ন তৃতীয় পর্যায়ের স্নায়ুতন্তু এরপর স্নায়ুপ্রবাহকে গুরুমস্তিষ্কের সংজ্ঞাবহ অঞ্চল এবং ফ্রন্টাল লােবে প্রেরণ করে। লঘুমস্তিষ্ক থেকে আগত স্নায়ুপ্রবাহকেও থ্যালামাস ফ্রন্টাল লােবের ৪ নং ও 6 নং অঞ্চলে প্রেরণ করে। তা ছাড়া থ্যালামাস গুরুমস্তিষ্কের কোনাে কোনাে অঞ্চল থেকে আগত স্নায়ুতন্ত্রের প্রেরক স্থান হিসেবেও কাজ করে।
প্রশ্ন:৮
সুষুম্নাকাণ্ডের কাজ কী ?
উত্তর:
(i) প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুকেন্দ্র—সুষুন্নকাণ্ড দেহের বিভিন্ন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার স্নায়ুকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
(ii) সংযােজী অঙ্গ—সুষুম্নাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন অন্তর্বাহী ও বহির্বাহী স্নায়ুপথ প্রবাহিত হওয়ায় এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও মস্তিষ্কের মধ্যে সংযােগস্থাপন করে।
(iii) স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র—স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের স্বতন্ত্র স্নায়ুগুলি সুষুম্নাকাণ্ডের বক্ষ ও লাম্বার অঞ্চল থেকে এবং পরাস্বতন্ত্র স্নায়ুর কটিস্নায়ুগুলি এর কটি অঞ্চল থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তাই সুষুম্নাকাণ্ডের এই অঞ্চলগুলি স্বয়ংক্রিয় স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
(iv) অন্যান্য কাজ—সুষুম্নাকাণ্ড পেশিটান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দেহভঙ্গি বজায় রাখে। তা ছাড়া রক্তবাহের ব্যাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। তা ছাড়া দেহউষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করে।
প্রশ্ন:৯
সুষুম্নাকান্ড কাকে বলে ?
উত্তর:
মেরুদণ্ডের গহ্বরে ফোরামেন ম্যাগনাম থেকে শুরু করে মেরুদণ্ডের প্রথম ও দ্বিতীয় কটিদেশীয় কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত ফাঁপা গােলাকার রজ্জুর মতাে সরু স্নায়ুস্তম্ভকে সুষুম্নাকাণ্ড বলে।
প্রশ্ন:১০
হাইপােথ্যালামাস কীভাবে দেহের জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে ?
উত্তর:
হাইপােথ্যালামাস দু-ভাবে দেহের জলসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে—
(i) হাইপােথ্যালামাস তৃষ্ণা অনুভূতি সৃষ্টি করে। এর ফলে প্রাণী অথবা ব্যক্তি জলপান করে।
(ii) হাইপােথ্যালামাস মূত্রের মাধ্যমে জলের রেচন নিয়ন্ত্রণ করে। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, হাইপােথ্যালামাসের সুপ্রা-অপটিক নিউক্লিয়াস দেহতরলের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে উদ্দীপিত হয়। এই উদ্দীপনা হাইপােথ্যালামাসের নিউরােহাইপােফাইসিয়াল স্নায়ুপথে বাহিত হয়ে পিটুইটারির পশ্চাখণ্ডে পৌঁছোলে সেখান থেকে অ্যান্টিডাইইউরেটিক হরমােন (ADH) ক্ষরিত হয়। ADH বৃক্কের সংগ্রাহী নালির মাধ্যমে জলের পুনঃশােষণ ঘটিয়ে মূত্রের মাধ্যমে জলের রেচন হ্রাস করে।
Comments
Post a Comment