ভারতীয় ইতিহাসে এবং জনজীবনে নদনদীর প্রভাব ভারত-একটি নদীমাতৃক দেশ। ভারতীয় সভ্যতার সূচনা ঘটে নদী-অববাহিকা অঞ্চল থেকে। ভারতীয় ইতিহাসের ওপরও সিন্ধু, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, গোদাবরী, যমুনা প্রভৃতি নদনদীর যথেষ্ট প্রভাব বর্তমান। নদনদীগুলি ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিকে সিক্ত করেছে, পলি মৃত্তিকায় উর্বর করেছে, আর শস্য-শ্যামলা করে ভারতীয় কৃষি-অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছে। অন্য দিকে নদী-উপকূলবর্তী অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে জনপদ, নগর, বাণিজ্যকেন্দ্র বা তীর্থস্থান। (১) সভ্যতার বিকাশ: সিন্ধুনদের অববাহিকাতেই জন্ম নেয় পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা। পঞ্চনদীর তীরে বিকাশ ঘটে বৈদিক সভ্যতার। পরবর্তীকালে গঙ্গা-অববাহিকা ধরে বৈদিক সভ্যতার বিকাশ ঘটে। সিন্ধু সভ্যতা: ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীনতম এবং অন্যতম উন্নত সভ্যতা সিন্ধু নদ এবং তার উপনদীগুলির তীরে গড়ে উঠেছিল। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোর মতো শহরগুলি নদীর উর্বর পলিমাটি এবং জল সরবরাহকে কাজে লাগিয়ে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলেছিল। গঙ্গা সভ্যতা: গঙ্গা নদী এবং তার অববাহিকা বরাবর পরবর্তীকালে বৈদিক সভ্যতা, মহাজনপদ এ...
মানব শারীরবিদ্যা
প্রশ্ন:১
অক্সিটোসিন-এর উৎস কাজ লেখাে।
উত্তর:
অক্সিটোসিন হাইপােথ্যালামাসের প্যারাভেন্ট্রিকুলার নিউক্লিয়াসে সংশ্লেষিত হয়ে হাইপােথ্যালামিক হাইপােফাইসিয়াল স্নায়ুপথে পশ্চাৎ পিটুইটারিতে পৌঁছােয় এবং সেখান থেকে ক্ষরিত হয়।
প্রশ্ন:২
বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধি হরমােনের স্বল্পতায় কী কী লক্ষণ প্রকাশ পায় ?
উত্তর:
অধিক বয়সের ছাপ পরিলক্ষিত হয়, অর্থাৎ 50 বছরের কোনাে ব্যক্তিকে দেখলে মনে হয় যেন তার বয়স 65।
অন্যান্য দৈহিক ও শারীরবৃত্তীয় প্রভাবগুলি হল—
(i) চামড়া কুঁচকে যায়,
(ii) বিভিন্ন অঙ্গের কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং
(iii) পেশির পরিমাণ ও ক্ষমতা কমে যায়।
প্রশ্ন:৩
হরমােন কী ? হরমােনকে রাসায়নিক দূত বলে কেন ?
উত্তর:
বিশেষ ধরনের কোশসমষ্টি (উদ্ভিদদেহে) বা অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি (প্রাণীদেহে) থেকে নিঃসৃত যেসব জৈব-রাসায়নিক পদার্থ দেহতরলের মাধ্যমে দূরবর্তী স্থানে বাহিত হয়ে দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্য অর্থাৎ বৃদ্ধি, পরিস্ফুরণ, জনন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে; যাদের প্রভাব ক্রমান্বয়িক, সুদূরপ্রসারী এবং ক্রিয়ার পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় তাদের হরমােন বলে। হরমােন উৎসস্থল থেকে দূরবর্তী স্থানে রাসায়নিক বার্তা বহন করে নিয়ে যায়। তাই হরমােনকে রাসায়নিক দূত বা কেমিক্যাল ম্যাসেঞ্জার বলে।
প্রশ্ন:৪
অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম কী ?
উত্তর:
পিটুইটারির অগ্রখণ্ডের বৃদ্ধি হরমােন নিঃসরণকারী অ্যাসিডােফিল কোশগুলির সক্রিয়তা যদি বয়ঃসন্ধিকালের (adolescence) পূর্বে বেড়ে যায় এবং এর ফলে অতিরিক্ত বৃদ্ধি হরমােন ক্ষরিত হয় তবে দৈহিক বৃদ্ধি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উচ্চতা 8 ফুট পর্যন্ত হয়। এই অবস্থাকে বলা হয় অতিকায়ত্ব বা জাইগ্যানটিজম (Gigantism)।
প্রশ্ন:৫
নেগেটিভ ফিডব্যাক (negative feed back) কী ?
উত্তর:
কোনাে গ্রন্থির ক্ষরিত পদার্থ যখন ওর উচ্চতর কেন্দ্রের ক্ষরণে বাধা সৃষ্টি করে সেই পদ্ধতিকে নেগেটিভ ফিড ব্যাক বলে। যেমন—পিটুইটারি গ্রন্থির অগ্রখণ্ড থেকে নিঃসৃত থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমােন (TSH) থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে থাইরক্সিন হরমােন ক্ষরণ ঘটায়। আবার রক্তে থাইরক্সিনের অধিক মাত্রা পিটুইটারি থেকে TSH-এর ক্ষরণ হ্রাসের মাধ্যমে থাইরয়েড থেকে থাইরক্সিনের ক্ষরণ হ্রাস করে। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণকে নেগেটিভ ফিডব্যাক (negative feedback) বলে।
প্রশ্ন:৬
পিটুইটারির পশ্চাদখণ্ডের স্বল্পক্ষরণজনিত লক্ষণগুলি কী কী ?
উত্তর:
(1) ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস (Diabetes Insipidus)—পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে ADH-এর ক্ষরণ কম হওয়ায় বৃক্কের দূরবর্তী নালিকা দ্বারা জলের পুনঃশোষণ উল্লেখযােগ্যভাবে কমে যায়। এর ফলে অধিক পরিমাণে (প্রতিদিন 15 লিটার বা তার বেশি) পাতলা মূত্র উৎপন্ন হয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বারবার মূত্র ত্যাগ করে, এই অবস্থাকে বলা হয় বহুমূত্র বা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস।
(2) অক্সিটোসিনের স্বল্পতাজনিত ফল—অক্সিটোসিনের স্বল্পতায় প্রসবকালীন অবস্থায় জরায়ুর সংকোচনের তীব্রতা উল্লেখযােগ্যভাবে হ্রাস পায়। ফলে স্বাভাবিক প্রসবক্রিয়া বিঘ্নিত হয়। তা ছাড়া স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ও দুগ্ধ নিঃসরণ কমে যায়।
প্রশ্ন:৭
হাইপােথ্যালামাস দ্বারা পশ্চাৎ পিটুইটারির হরমােন ক্ষরণ কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় ?
উত্তর:
পিটুইটারি পশ্চাদখণ্ড ও হাইপােথ্যালামাসের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। পশ্চাদখণ্ডের দুটি হরমােন—ADH ও অক্সিটোসিন হাইপােথ্যালামাসের সুপ্রাঅপটিক (Supraoptic) ও প্যারাভেন্ট্রিকুলার (Paraventricular) নিউক্লিয়াসে সংশ্লেষিত হয় এবং হাইপােথ্যালামিক হাইপােফাইসিয়াল স্নায়ুপথে পশ্চাৎ পিটুইটারিতে পৌঁছোয়। হাইপােথ্যালামাস থেকে আগত স্নায়ু উদ্দীপনায় উদ্দীপিত হলে পশ্চাৎ পিটুইটারি থেকে হরমােন ক্ষরিত হয়। অর্থাৎ পশ্চাৎ পিটুইটারি হরমােন নিঃসরণ সম্পূর্ণভাবে হাইপােথ্যালামাস নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রশ্ন:৮
হরমােনের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ (double control) বলতে কী বােঝায় ?
উত্তর:
কোনাে কোনাে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় একাধিক হরমােন অংশগ্রহণ করে। সেখানে একটি হরমােন প্রক্রিয়াটিকে সহায়তা করে এবং অন্য হরমােন প্রক্রিয়াটিতে বাধা সৃষ্টি করে। যেমন—ইনসুলিন রক্তশর্করার পরিমাণ হ্রাস করে কিন্তু গ্লুকাগন রক্তশর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। একে হরমােনের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ বলে।
প্রশ্ন:৯
অক্সিটোসিন-এর শারীরবৃত্তীয় কাজ উল্লেখ করো।
উত্তর:
অক্সিটোসিন-এর শারীরবৃত্তীয় কাজ—অক্সিটোসিন গর্ভাবস্থার শেষের দিকে জরায়ুর শক্তিশালী সংকোচন ঘটায়। জরায়ুর এই শক্তিশালী সংকোচনের জন্যই প্রসবকালীন ব্যথা (labor pain) অনুভূত হয়। এইভাবে এটি শিশুপ্রসবে সাহায্য করে। এটি স্তনগ্রন্থির মায়ােএপিথেলিয়াল কোশের সংকোচনের দ্বারা দুগ্ধ নিঃসরণ ত্বরান্বিত করে।
প্রশ্ন:১০
ADH-এর উৎস ও শারীরবৃত্তীয় কাজ উল্লেখ করাে।
উত্তর:
ADH হাইপােথ্যালামাসের সুপ্রাঅপটিক নিউক্লিয়াসে সংশ্লেষিত হয় এবং পিটুইটারি গ্রন্থির পশ্চাদখণ্ড থেকে ক্ষরিত হয়।
ADH-এর শারীরবৃত্তীয় কাজ—সূক্ষ্মমাত্রায় ADH বৃক্কীয় নালিকার ভেদ্যতা (permeability) বৃদ্ধি করে। ফলে গ্লোমেরুলাস দ্বারা পরিস্রুত তরল থেকে বেশিরভাগ জল পুনঃশােষিত হয়ে রক্তে ফিরে যায়। এইভাবে ADH দ্বারা দেহের জল সংরক্ষণ হয়। তা ছাড়া ADH-এর উচ্চ ঘনত্ব সারাদেহে ধমনিকাগুলির সংকোচন ঘটিয়ে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। তাই ADH-এর অপর নাম ভেসােপ্রেসিন।

Comments
Post a Comment