বায়ুমণ্ডল
প্রশ্ন:১
হ্যারিকেন কী ?
উত্তর:
পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ সংলগ্ন ক্যারিবিয়ান সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হ্যারিকেন’ নামে পরিচিত। সমুদ্রের জলরাশি উষ্ণ হলে (২৭° বা তার বেশি) তার ওপর গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় এবং ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি হয়। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ব্যাস হয় ২০০-৬০০ কিমি এবং বাতাসের গতিবেগ হয় ঘণ্টায় প্রায় ১৫০-২০০ কিমি। হ্যারিকেন খুবই বিধ্বংসী ঝড়। এই ঝড়ের প্রভাবে মেক্সিকো ও পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে প্রচুর পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাতও ঘটে। তবে নিম্নচাপ কেন্দ্রের ঠিক মাঝখানে ১০-৫০ কিমি ব্যাসযুক্ত একটি শান্ত ও বৃষ্টিহীন অঞ্চল অবস্থান করে। অঞ্চলটিকে ‘ঝড়ের চোখ’ বলে।
প্রশ্ন:২
অধঃক্ষেপণ বলতে কী বোঝো ?
উত্তর:
ঊর্ধ্বগামী জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু অতিরিক্ত শীতলতার সংস্পর্শে এলে ঘনীভূত হয় এবং জলকণা ও তুষারকণায় পরিণত হয়। এই ক্ষুদ্র জলকণা ও তুষারকণাগুলি ক্রমশ আয়তনে বড়াে ও ওজনে ভারী হলে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসে। সুতরাং, জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুশীতল ও ঘনীভূত হয়ে, কঠিন বা তরল আকারে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠে পতিত হলে তাকে একত্রে অধঃক্ষেপণ বলে। বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিলাবৃষ্টি প্রভৃতি হল অধঃক্ষেপণের ভিন্ন ভিন্ন রূপ।
প্রশ্ন:৩
টর্নেডাে কী ?
উত্তর:
স্পেনীয় শব্দ ‘টর্নেডাে’-র অর্থ ‘বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড় বৃষ্টি’। টর্নেডাে পৃথিবীর প্রবলতম ঝড়। যুক্তরাষ্ট্রের মেক্সিকো উপকূল ও মিসিসিপি নদী অববাহিকায় প্রবলতম ঝড় টর্নেডাে নামে পরিচিত। অতি অল্পস্থান জুড়ে অত্যন্ত শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে টর্নেডোর উৎপত্তি হয়। টর্নেডাের কেন্দ্রে ঘন কালাে মেঘ ফানেলের মতাে বা কালাে থামের মতাে আকৃতি ধারণ করে ভূমি থেকে ঊর্ধ্বাকাশে অবস্থান করে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ব্যাস হয় ১০০-৫০০ কিমির মধ্যে। বাতাস কুণ্ডলী আকারে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং প্রায় ৪০ কিমি পর্যন্ত ওপরে ওঠে। এর স্থায়িত্ব মাত্র কয়েক মিনিট হলেও, বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৩০০-৫০০ কিমি পর্যন্ত হওয়ায় প্রবাহিত অঞ্চলকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এর প্রভাবে সমুদ্রে জলস্তম্ভের সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন:৪
আঁধি কী ?
উত্তর:
‘আঁধি’ হল ধূলিঝড়। দীর্ঘ, শুষ্ক গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রায় ৭০-১০০ কিমি বেগে ধূলিঝড় সৃষ্টি হয়। ধূলিঝড়ে আকাশ যেন আঁধার হয়ে আসে, তাই এর এরূপ নাম।
প্রশ্ন:৫
আয়ন বায়ু কাকে বলে ?
উত্তর:
উভয় গােলার্ধের ক্রান্তীয় উচ্চচাপবলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপবলয়ের দিকে যে নিয়ত বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে আয়ন বায়ু বলে। সাধারণত উভয় গােলার্ধে ৫°-১০° অক্ষরেখার মধ্যে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, আয়ন বায়ু উত্তর গােলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যথাক্রমে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুরূপে প্রবাহিত হয়।
প্রশ্ন:৬
পম্পেরাে কী ?
উত্তর:
বসন্তকালে দক্ষিণ আমেরিকায় আন্দিজ পর্বতের পাদদেশ থেকে যে উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু আর্জেন্টিনার পম্পাস তৃণভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে ‘পম্পেরাে’ বলে।
প্রশ্ন:৭
সাইক্লোন কী ?
উত্তর:
বঙ্গোপসাগর, আরবসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন নামে পরিচিত। এই ঝড়ের প্রভাবে ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বছরে দু-বার অর্থাৎ মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই ঝড়ের সৃষ্টি হয়। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের ওপর শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে সাইক্লোন ঝড়ের উৎপত্তি হয়। এর প্রভাবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। সাইক্লোনের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলে জলােচ্ছ্বাস ঘটে এবং ব্যাপক সম্পত্তি ও জীবনহানি ঘটে। আরবসাগর অপেক্ষা বঙ্গোপসাগরের উপর বেশি সংখ্যায় সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। ভারতে—পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধপ্রদেশ ব্যাপকভাবে সাইক্লোনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রশ্ন:৮
চিনুক কী ?
উত্তর:
প্রধানত শীতকাল ও বসন্ত ঋতুর প্রথমে, উত্তর আমেরিকায় রকি পর্বতের পূর্ব ঢাল বরাবর অধঃগামী উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুর স্থানীয় নাম ‘চিনুক’। উষ্ণ চিনুক বায়ুর প্রভাবে পর্বতের পাদদেশে ও প্রেইরি অঞ্চলের জমা বরফ গলে যায়। তাই স্থানীয় রেড-ইন্ডিয়ানরা এই বায়ুর নাম দিয়েছে ‘চিনুক’—যার অর্থ ‘তুষার ভক্ষক’।
প্রশ্ন:৯
লু কী ?
উত্তর:
গ্রীষ্মকালে দিনেরবেলা উত্তর-পশ্চিম ভারতে একপ্রকার উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ু পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু ‘লু’ নামে পরিচিত। এই বায়ুর উষ্ণতা ৪৫°-৫০° সেলসিয়াস-এর মধ্যে। আসলে, ‘লু’ একপ্রকার তাপপ্রবাহ। সন্ধ্যার পর এই বায়ুর তীব্রতা কমে।
প্রশ্ন:১০
টাইফুন কী ?
উত্তর:
চিন-জাপান থেকে ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সৃষ্ট বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় টাইফুন নামে পরিচিত। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চিন সাগরের ওপর গভীর ও শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হওয়ায় টাইফুন-এর সৃষ্টি হয়। বায়ু প্রবল গতিতে কুণ্ডলী আকারে ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রে প্রবেশ করে এবং ১৩-১৪ কিমি পর্যন্ত ওপরে উঠে পড়ে। ঝড়ের গতিবেগ থাকে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিমির মতাে। এর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ঝড়ের স্থায়িত্ব অল্প হলেও, ঘূর্ণিঝড় শীতল স্থলভাগের দিকে তীব্রগতিতে আছড়ে পড়ার ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
Comments
Post a Comment