বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারত-ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এক মহাদেশের সারাংশ (Epitome of the World) ভারতবর্ষ শুধুমাত্র একটি দেশ নয়, এটি একটি উপ-মহাদেশের সমতুল্য। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতা এবং সাংস্কৃতিক বিপুলতা সত্ত্বেও এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ইতিহাসে যে "অন্তর্নিহিত মৌলিক ঐক্য" ( Fundamental Unity ) বারবার প্রকাশিত হয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে যথার্থই " India offers unity in diversity " বা "বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য" বলে আখ্যা দিয়েছেন। যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষের মিলনকেন্দ্র হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে "মহামানবের সাগরতীর" নামে অভিহিত করেছেন। ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যের স্বরূপ (The Nature of Diversity) ভারতের বৈচিত্র্যকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: ক) প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক বৈচিত্র্য: ভূ-প্রকৃতি: উত্...
ভঙ্গিল পর্বত
গিরিজনি ভূ-আলোড়নের ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলাস্তরে ঢেউ-এর মতো ভাঁজ পড়ে যে পর্বতের সৃষ্টি হয় তাকে ভঙ্গিল বা ভাঁজ পর্বত বলে। ভূতাত্ত্বিকগণ মনে করেন যে, বর্তমানে যেসব অঞ্চলে ভঙ্গিল পর্বতগুলো অবস্থিত, প্রাচীনকালে সেখানে ছিল বিস্তীর্ণ নীচু অঞ্চল— ভূতাত্ত্বিক ভাষায় যার নাম মহীখাত বা অগভীর সমুদ্র। কালক্রমে যুগ যুগ ধরে পলি পড়ে ধীরে ধীরে এই অগভীর সমুদ্রটি ভরাট হয়ে যায়।
ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তি সম্পর্কে সর্বাধুনিক তত্ত্ব হিসেবে পাতসংস্থান তত্ত্ব উল্লেখযোগ্য। সর্বাধুনিক পাত সংস্থান তত্ত্ব অনুসারে—ভূত্বক কতকগুলি গতিশীল পাতের সমন্বয়ে গঠিত। পাতগুলি একই গতিতে বা একই দিকে চলমান নয়। যখন দুটি পাত পরস্পরের মুখোমুখি হয় অথবা গতির তারতম্যে একটি পাত অন্যটির পিছনে ধাক্কা দেয় তখন উভয়পাতের সংযোগ বরাবর প্রবল পার্শ্বচাপের প্রভাবে নমনীয় ভূত্বকে সঞ্চিত পলিস্তরে ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। যেমন—হিমালয়, আল্পস, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি। একাধিক ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণি পাশাপাশি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে। একে ভঙ্গিল পর্বতমালা বলে।
পার্শ্বচাপের প্রভাবে সঞ্চিত পলিস্তরে যে ভাঁজ পড়ে সেই ভাঁজগুলি নানান ধরনের হতে পারে, যেমন–ন্যাপ, রিকামবেন্ট ফোল্ড প্রভৃতি। পরবর্তীকালে এই সমস্ত ভাঁজগুলো দৃঢ়সংঘবদ্ধ ও উঁচু হয়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি করেছে। হিমালয় পর্বতমালা, ভঙ্গিল পর্বতের উত্তল ভাঁজগুলিকে ঊর্ধ্বভঙ্গ এবং অবতল ভাঁজগুলিকে অধঃভঙ্গ ভাঁজ বলে। ঊর্ধ্বভঙ্গ ও অধঃভঙ্গ ভাঁজ যথাক্রমে পর্বতশৃঙ্গ ও উপত্যকারূপে অবস্থান করে। ভঙ্গিল পর্বত প্রধানত পাললিক শিলায় গঠিত তাই এই পর্বতে জীবাশ্ম পাওয়া যায় এবং এর দ্বারা ভঙ্গিল পর্বতের বয়স নির্ধারণ করা যায়। ভঙ্গিল পর্বতগুলি বহুশৃঙ্গবিশিষ্ট হয় এবং পর্বতশ্রেণিগুলি প্রস্থ অপেক্ষা দৈর্ঘ্যে বেশি বিস্তৃত হয়। বয়সের বিচারে ভঙ্গিল পর্বত প্রাচীন বা নবীন হতে পারে। আল্পস, আরাবল্লি প্রাচীন এবং হিমালয় নবীন প্রভৃতি হল ভঙ্গিল পর্বতের উদাহরণ।
Comments
Post a Comment