Skip to main content

সাম্প্রতিক পোস্ট

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।   অথবা,  একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।  অথবা,  নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও।             উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়।  এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়।  নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা:       পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...

বায়ুদূষণ

বায়ুদূষণ


        মানুষ খাবার ছাড়া বাঁচতে পারে প্রায় 50 দিন, জল ছাড়া প্রায় সাত দিন, আর বাতাস ছাড়া মাত্র পাঁচ মিনিট। এই বাতাসে থাকে অক্সিজেন, যা আমরা শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি।

       ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (WHO)-এর মতে, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মধ্যে অনিষ্টকর পদার্থের সমাবেশ যখন মানুষ ও তার পরিবেশের ক্ষতি করে, সেই অবস্থাকে বায়ুদূষণ বলে। আবহমণ্ডলের দূষিত ধোঁয়া, গ্যাস, গন্ধ, বাষ্প ইত্যাদি যে পরিমাণে ও যতক্ষণ স্থায়ী হলে মানুষ, জীবজন্তু ও উদ্ভিদজগতের ক্ষতি হয় বা বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা যে সমস্ত দূষিত পদার্থ মানুষের জীবন ও স্বাচ্ছন্দ্যে বাধা দেয় তাকে বায়ুদূষণ বলে।

       বায়ুদূষণের পরিধি ও ব্যাপকতা সবচেয়ে বেশি কারণ বাতাস সবচেয়ে তাড়াতাড়ি দূষিত পদার্থকে চারিদিকে ছড়িয়ে দিতে পারে। বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির কোনো একটি বা দুটি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি মাত্রায় থাকে তাহলে বায়ু দূষিত হয । প্রাকৃতিক উৎস যেমন আগ্নেয়গিরি বা বায়ুবাহিত ধূলিকণা, জৈবপদার্থ পচনের দুর্গন্ধ; মনুষ্যসৃষ্ট উৎস যেমন কলকারখানা ও গাড়ির ধোঁয়া, ধুলো, গ্যাস এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উৎস যেমন— কার্বন ডাইঅক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতির মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল প্রতিনিয়তই দূষিত হচ্ছে। দূষণের ফলে একদিকে যেমন উষ্ণতা বাড়ছে, বৃষ্টিপাত ও মাটির আর্দ্রতা কমছে, অন্যদিকে জীবজন্তুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমছে, রোগ-ব্যাধির আক্রমণ বাড়ছে।

      স্বাভাবিকভাবে বায়ুর অন্যান্য উপাদান আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর নয়। কিন্তু বাতাসে মেশে নানা ক্ষতিকর পদার্থ। এর ফলে সেগুলিও শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢোকে এবং নানা ধরনের স্বাস্থ্যহানির কারণ হয়।
 

বায়ুদূষণের উৎস (Sources of Air Pollution)— 

উল্লেখযোগ্য যেসব উৎস থেকে বায়ুদূষণ ঘটে সেগুলি নিম্নে বর্ণিত হল।

(ক) যানবাহনের ধোঁয়া— 
ডিজেল ও পেট্রোলচালিত গাড়ি, কয়লাচালিত রেলগাড়ি, এরোপ্লেন ইত্যাদি থেকে নিসৃত ধোঁয়া অত্যন্ত বিষাক্ত। বায়ুদূষণের শতকরা প্রায় 60 ভাগই এই কারণে ঘটে। এইসব ধোঁয়ায় মিশে থাকে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বিভিন্ন ধরনের হাইড্রোকার্বন ইত্যাদি। এছাড়া রাস্তাঘাটে যানবাহনের ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে নেওয়ার সময় সূক্ষ্ম কার্বন কণিকাও ফুসফুসে ঢোকে।

(খ) কলকারখানা— 
কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া, ছাই, ধুলো এবং তার সঙ্গে মিশে থাকা নানা রাসায়নিক পদার্থও বাতাসকে দূষিত করে তোলে। 

(গ) জ্বালানি— 
বাড়ির জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের ফলে কার্বন মনোক্সাইড বাতাসে নির্গত হয়। কয়লার দহনেও সালফার ডাইঅক্সাইডসহ নানা রাসায়নিক দূষক পদার্থ বাতাসে মেশে।

(ঘ) ধূমপান— 
ধূমপানের ফলে নির্গত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে। এই ধোঁয়ায় অজস্র ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যেমন ক্লোরোবেঞ্জিন। এটি ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।

(ঙ) কীটনাশক ও আগাছানাশক রাসায়নিক পদার্থ— 
মাঠে বা খেতে ছড়ানোর সময় এগুলিও বাতাসে মেশে। এছাড়া এগুলি যেসব কারখানায় তৈরি হয়, সেগুলি থেকেও বায়ুদূষণ ঘটে। 

(চ) উদ্ভিজ্জ অংশ বা জীবাণুর দ্বারা দূষণ— 
ক্ষতিকর বিভিন্ন ছত্রাক, ফুলের রেণু ইত্যাদির কারণেও বায়ু দূষিত হয়। এর থেকে অ্যালার্জি ও হাঁপানি হতে পারে।

(ছ) তেজস্ক্রিয় পদার্থ— 
বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে তো বটেই, আমাদের দেশেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার ফলে এই বিশেষ ধরনের বায়ুদূষণ ঘটছে।

(জ) প্লাস্টিক দহন— 
প্লাস্টিক পোড়ার ফলে নানা রাসায়নিক পদার্থ বাতাসে মেশে। এই ধরনের নানা উৎস থেকে যেসব দূষক পদার্থ নির্গত হয়, (primary pollutants), সেগুলি থেকে অন্যান্য নানা পদার্থও (secondary pollutants) তৈরি হয়। এদের অনেকগুলিই আরও ক্ষতিকর। যেমন, ধোঁয়া (smoke) ও কুয়াশা (fog) মিলে তৈরি হয় ধোঁয়াশা (smog)। বিভিন্ন যানবাহন ও কারখানা থেকে এবং কয়লার দহনের ফলে ধোঁয়া বের হয়। সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে এই ধোঁয়ায় থাকা নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড ও হাইড্রোকার্বন থেকে ক্ষতিকর পারক্সি অ্যাসিটাইল নাইট্রেট (PAN) ও ওজোন তৈরি হয়। সাধারণভাবে স্ট্রাটোস্ফিয়ারের ওজোন ক্ষতিকর নয়। কিন্তু, ভূপৃষ্ঠের ঠিক উপরে থাকা বায়ুমণ্ডলের ট্রোপোস্ফিয়ারে ওজোনের উপস্থিতি বিপদ ডেকে আনে। আমাদের দেশে ঘনবসতি এলাকা, শিল্পসমৃদ্ধ অঞ্চল ইত্যাদির উপর প্রায়শই সন্ধ্যার সময় ধোঁয়াশা ভেসে থাকতে দেখা যায়। ধোঁয়াশায় কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডের মতো অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থও মিশে থাকে।

বায়ুদূষণের প্রভাব (Effects of Air Pollution)— 

বাতাস দূষিত হলে তার প্রভাব পৃথিবীর সমস্ত জড়, জীব আর উদ্ভিদ সমস্ত কিছুরই উপরই পড়ে। 

(ক) পরিবেশের উপর প্রভাব— 
বায়ুদূষণের ফলে বড়ো বড়ো অট্টালিকা, স্মৃতিসৌধ ইত্যাদির ক্ষয় ঘটতে থাকে। সালফার ডাইঅক্সাইড, লোহা, দস্তা, তামা ইত্যাদিকে ক্ষইয়ে দিতে থাকে। কাগজ, কাপড়, চর্মজ পদার্থ, রং ইত্যাদিও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা আগ্রার তাজমহলের মতো বিখ্যাত স্মৃতিসৌধগুলি বর্তমানে এইভাবে বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। বৃষ্টির জলে মিশে এই অ্যাসিড মাটিতে ঝরে পড়ে। একে বলা হয় অম্লবৃষ্টি বা অ্যাসিড রেন। এর ফলে গাছপালা, বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া ধূলি, ধোঁয়া ইত্যাদি জনিত বায়ুদূষণের কারণে বাতাসের স্বচ্ছতা কমে যাচ্ছে। এর ফলে পর্যাপ্ত সূর্যালোক মাটিতে পৌঁছাচ্ছে না। এর ক্ষতিকর প্রভাবও আমাদের ও গাছপালার উপর পড়ে। এছাড়া ঘটছে গ্রিন হাউস এফেক্ট। কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, জলীয় বাষ্প এবং ক্লোরোফ্লুরো কার্বন ইত্যাদি মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ বায়ুস্তরে জমছে। এগুলি ভূপৃষ্ঠ থেকে উত্তাপ মহাকাশে বিলীন হতে বাধা দেয়। ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে। একেই বলা হয় গ্রিন হাউস এফেক্ট। এর ফলে এত হাজার বছরে যা হয়নি, বিগত 100 বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়েছে 0-6° C। এইভাবে তাপমাত্রা যদি আর 2 থেকে 4.5° C বাড়ে তাহলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাবে। সাগরের জলতল বাড়বে, ফলে মুম্বাই শহরসহ ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিশাল এলাকা জলের তলায় চলে যাবে। এছাড়া ভয়াবহ সাইক্লোন, টর্নেডো ইত্যাদির সম্ভাবনাও বাড়বে।
বায়ুদূষণের আরেকটি ভয়াবহ পরিণাম বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার থাকা ওজোন স্তরের ক্ষয়। এই ওজোন স্তরের ক্ষয়ের কারণে সূর্য থেকে পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ছে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মি। ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, ফোমের গদি ইত্যাদি থেকে বাতাসে মিশছে ক্লোরোফ্লুরো কার্বন নামক একটি রাসায়নিক পদার্থ। এটিরই কুপ্রভাবে ঘটছে ওজোন স্তরের এই ক্ষয়।

( খ ) মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব— 
মানুষসহ সমস্ত প্রাণীর শরীর স্বাস্থ্যই বিপর্যস্ত হচ্ছে বায়ুদূষণের কারণে। এখন শিশুদের মধ্যেও কাশি, হাঁপানিসহ শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ ভয়বাহভাবে বাড়ছে, বিশেষ করে বড়ো বড়ো শহরে। এর প্রধান কারণই হল বায়ুদূষণ। বাতাসে মিশে থাকা অতিরিক্ত পরিমাণ কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, মিথেন ইত্যাদি গ্যাস এবং ধুলো ও তার সঙ্গে মিশে থাকা নানা রাসায়নিক পদার্থই এই ভয়াবহ রোগের জন্য দায়ী। ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণে অতিরিক্ত অতি বেগুনি রশ্মি ঘটাচ্ছে ত্বক সহ শরীরের নানা অংশের ক্যানসার, চোখের ছানি ইত্যাদি। কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসটি রক্তের সঙ্গে মিশে রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতা কমিয়ে দেয়। বেঞ্জিন দূষণ ঘটায় নিদ্রাহীনতা ও স্মৃতি বিভ্রম। নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডের কারণে চোখ, মুখ, নাক, গলা, ফুসফুস ইত্যাদির নানা ধরনের রোগ দেখা দেয়। বেঞ্জোপাইরিন ফুসফুসের ক্যানসার ঘটায়। এছাড়া বায়ুদূষণের কারণে বিশেষ পেশার লোকেদের বিশেষ রোগ দেখা দেয়, যেমন– কয়লাখনি এলাকায় কৃষ্ণ ফুসফুস (ব্ল্যাক লাং), অ্যাসবেস্টসের পাইপ ইত্যাদি বানানোর কাজে নিযুক্ত লোকেদের অ্যাসবেস্টোসিস ইত্যাদি। বর্তমানে প্লাস্টিকজাত পদার্থ পুড়ে যে ডাই-অক্সিন নামক অতি বিষাক্ত পদার্থ নির্গত হয় তা বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অতি নগণ্য পরিমাণই একজনকে ক্যানসার আক্রান্ত ও সারা জীবনের জন্য বন্ধ্যা করে দিতে পারে।

(গ) প্রাণী ও উদ্ভিদের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব—
মানুষের মতো অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও বায়ুদূষণের কারণে প্রায় একই ধরনের রোগ দেখা দেয়। অম্লবৃষ্টির কারণে জলজ উদ্ভিদ ও পোকামাকড় মারা যায়, মাছের উৎপাদন ভীষণভাবে কমে যায় এবং শ্যাওলার বাড়বাড়ন্ত ঘটে। এছাড়া উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বংশবৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের মতো উদ্ভিদের পক্ষে প্রয়োজনীয় পদার্থ মাটিতে কমে যায় এবং অ্যালুমিনিয়াম ও দস্তার মতন ক্ষতিকর পদার্থের আধিক্য ঘটে। ফলে উদ্ভিদের গঠনগত বিকৃতি দেখা দেয়। ওজোন স্তরের ক্ষতির কারণেও একই ধরনের ক্ষতি হয়। গাছের পাতার রং পালটে সাদা সাদা দাগ দেখা দেয়, জলের বাস্তুতন্ত্র বিপর্যস্ত হয়।

বায়ুদূষণের প্রতিকার (Abatement of an Pollution)— 

সারা পৃথিবী জুড়েই কলকারখানার উপর  কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু হয়েছে। যানবাহনের সংখ্যা এবং ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করাও প্রয়োজন। বিশেষ ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত, যেমন—

(ক) কারখানা থেকে ধুলো ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য স্থির তড়িৎ অধঃক্ষেপক (Electrostatic precipitator)-এর ব্যবহার আবশ্যিক করা প্রয়োজন। 

(খ) যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য অনুঘটকীয় কনভার্টার (Catalytic converter), ন্যূনতম দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানি ইত্যাদির ব্যবহার করা আবশ্যিক। 

(গ) প্লাস্টিকজাত পদার্থের ব্যবহার যতটা সম্ভব কমিয়ে দেওয়া প্রয়োজন। যেমন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে কাগজের, চটের বা কাপড়ের ব্যাগের প্রচলন।

(ঘ) রাসায়নিক কীটনাশক ও সারের পরিবর্তে অভিজ্ঞতাসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক কীটনাশক ও জৈব সারের প্রচলন করা।

(ঙ) যেখানে অ্যামোনিয়া ও সালফার ডাইঅক্সাইড নির্গত হচ্ছে, সেই উৎসমূলে জল সিঞ্চন করে সেগুলিকে দূর করা, যাতে তারা বাতাসে না মিশতে পারে।

(চ) বিভিন্ন কারখানায় বায়ু পরিশোধনের জন্য বিশেষ ফিলটার ব্যবহার করা।

(ছ) লোকবসতি এলাকা ও কারখানার মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব রাখা।

(জ) ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থকে অন্য কোনো রাসায়নিক দিয়ে নিষ্ক্রিয় করা।

(ঝ) ক্ষতিকর পদার্থের পরিবর্তে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পদার্থের ব্যবহার করা এবং ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের ব্যবহার বন্ধ করা।

(ঞ) বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন— বায়ুদূষণ কমানোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় হচ্ছে ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করা। গাছের পাতায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও অন্যান্য পদার্থ আটকে যায়, ফলে বাতাসে তাদের মাত্রা বাড়ে না। এছাড়া, গাছ বাতাসের সালফার ডাইঅক্সাইড দূর করতে সাহায্য করে। তাই শিল্পাঞ্চলে প্রচুর গাছ লাগানো দরকার।











আরও পড়ুন::




































































































































Comments

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘর্ণবাত-এর পার্থক্য

  ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘর্ণবাত-এর পার্থক্য Sl. No. ঘূর্ণবাত প্রতীপ ঘূর্ণবাত 1 ঘূর্ণবাতের নিম্নচাপ কেন্দ্রের চারিদিকে থাকে বায়ুর উচ্চচাপ বলয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উচ্চচাপ কেন্দ্রের চারিদিকে থাকে বায়ুর নিম্নচাপ বলয়। 2 নিম্নচাপ কেন্দ্রে বায়ু উষ্ণ, হালকা ও ঊর্ধ্বগামী হয়। উচ্চচাপ কেন্দ্রে বায়ু শীতল, ভারী ও নিম্নগামী হয়। 3 ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে, ফলে বিস্তীর্ণ অঞ্চল অল্প সময়ে প্রভাবিত হয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাত দ্রুত স্থান পরিবর্তন করে না। 4 ঘূর্ণবাতের প্রভাবে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে এবং বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হয়। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। বৃষ্টিপাত ও ঝড়-ঝঞ্ঝা ঘটে না। মাঝেমাঝে তুষারপাত ও কুয়াশার সৃষ্টি হয়৷ 5 ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ বিরাজ করে। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে উচ্চচাপ বিরাজ করে। 6 চারিদিক থেকে ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রের দিকে বায়ু ছুটে আসে অর্থাৎ বায়ুপ্রবাহ কেন্দ্রমুখী। প্রতীপ ঘূর্ণবাতে কেন...

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (১৮৭৮ খ্রি.)

দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন প্রবর্তন সাম্রাজ্যবাদী গভর্নর–জেনারেল লর্ড লিটন দেশীয় পত্রপত্রিকার কণ্ঠরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে দেশীয় ভাষা সংবাদপত্র আইন (Vernacular Press Act, 1878) জারি করেন। পটভূমি ঊনবিংশ শতকে দেশীয় সংবাদপত্রগুলিতে সরকারি কর্মচারীদের অন্যায় আচরণ, অর্থনৈতিক শোষণ, দেশীয় সম্পদের বহির্গমন, দেশীয় শিল্পের অবক্ষয় ইত্যাদি নানা বিষয় তুলে ধরা হয়। ইতিহাসবিদ এ.আর.দেশাইয়ের মতে, “ভারতীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশে সংবাদপত্র হল এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম”।

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।

নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও।   অথবা,  একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।  অথবা,  নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও।             উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়।  এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়।  নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা:       পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল ?

জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল      ভারতীয় জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল মূলত ভারতবাসীর আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণ ও ব্রিটিশবিরোধী ক্ষোভের হাত থেকে ব্রিটিশ শাসনকে রক্ষা করার জন্যই।  জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য (১) কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন— উদ্দেশ্য ঘোষণা—বোম্বাইয়ের গোকুলদাস তেজপাল সংস্কৃত কলেজ হল জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশনে (১৮৮৫ খ্রি., ২৮ ডিসেম্বর) সভাপতির ভাষণে উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে চারটি মূল উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। এগুলি হল—   (i) ভাষাগত ও ধর্মীয় বৈচিত্রে ভরা ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের দেশপ্রেমীদের মধ্যে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও একাত্মতা গড়ে তোলা, (ii) সম্প্রীতির দ্বারা জাতি, ধর্ম, প্রাদেশিকতার তুচ্ছ সংকীর্ণতা দূর করে জাতীয় সংহতির পথ প্রশস্ত করা, (iii) শিক্ষিতদের সুচিন্তিত মতামত গ্রহণ করে সামাজিক ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উপায় নির্ণয় করা, (iv) ভারতের রাজনৈতিক অগ্রগতির জন্য ভবিষ্যৎ কর্মসূচি গ্রহণ করা।

ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য

  ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য Sl. No. ভরা কোটাল মরা কোটাল 1 চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য একই সরল রেখায় অবস্থান করলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ পৃথিবীর একই স্থানের উপর কার্যকরী হয়, ফলে ভরা কোটালের সৃষ্টি হয়। চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্য সমকোণী অবস্থানে থাকলে পৃথিবীর উপর চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ পরস্পর বিপরীত ও বিরোধী হয়, ফলে মরা কোটালের সৃষ্টি হয়। 2 মানবজীবনের উপর ভরা কোটালে (নদী-মোহানা, নৌ-চলাচল, মাছ আহরণ ইত্যাদি)-র প্রভাব বেশি। মানবজীবনের উপর মরা কোটালের প্রভাব কম। 3 ভরা কোটাল হয় অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে। মরা কোটাল হয় শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে। 4 ভরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতল সবচেয়ে বেশী স্ফীত হয়। মরা কোটালের ক্ষেত্রে সাগর-মহাসাগরের জলতলের স্ফীতি সবচেয়ে কম হয়। 5 অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই পাশে একই সরলরেখায় চাঁদ ও সূর্য অবস্থান করে। পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য ও চাঁদের মাঝে পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমীত...

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা

প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা ‘মেখলা’ শব্দের মানে হল ‘কোমর বন্ধনী’। অসংখ্য আগ্নেয়গিরি মেখলা বা কোমর বন্ধনীর আকারে কোনো বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যখন অবস্থান করে, তখন তাকে ‘আগ্নেয় মেখলা’ বলা হয়। ভূবিজ্ঞানীর মতে, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে ও এশীয় মহাদেশীয় পাতের সঙ্গে প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাতের ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে পাত সীমায় ফাটল বরাবর অগ্ন্যুৎপাত ঘটে থাকে এবং আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়। 

ষাঁড়াষাঁড়ি বান

ষাঁড়াষাঁড়ি বান              বর্ষাকালে স্বাভাবিক কারণেই নদীতে জলের পরিমাণ ও বেগ বেশি থাকে। এই সময় জোয়ারের জল নদীর    মোহানায় প্রবেশ করলে জোয়ার ও নদীস্রোত—এই বিপরীতমুখী দুই স্রোতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এর ফলে নদীর জল প্রবল শব্দ সহকারে প্রচণ্ড স্ফীত হয়ে ওঠে।  

হিমানী সম্প্ৰপাত

হিমানী সম্প্ৰপাত           পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পার্বত্য অঞ্চলে তুষারক্ষেত্রের জমাট বাঁধা বরফ অত্যন্ত ধীরগতিতে পর্বতের ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নেমে আসতে থাকে। সময় সময় পাহাড়ের ঢালে চলমান এইরকম হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ ভেঙে বিপুলবেগে নীচের দিকে পড়তে দেখা যায়, একে হিমানী সম্প্রপাত বলে।  

ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

ভঙ্গিল পর্বতের বৈশিষ্ট্যগুলি হল— (১) বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে কোমল পাললিক শিলায় ঢেউ-এর মতো ভাঁজ পড়ে ভঙ্গিল পর্বতের সৃষ্টি হয়। (২) প্রধানত সমুদ্রগর্ভ থেকে সৃষ্টি হয় বলে ভঙ্গিল পর্বতে জীবাশ্ম দেখা যায়। (৩) ভঙ্গিল পর্বতগুলি সাধারণত পাললিক শিলায় গঠিত হলেও অনেক সময় ভঙ্গিল পর্বতে আগ্নেয় এবং রূপান্তরিত শিলার সহাবস্থান চোখে পড়ে (কারণ—ভঙ্গিল পর্বত সৃষ্টির সময় শিলাস্তরে ফাটল সৃষ্টি হলে, সেই ফাটল দিয়ে ভূগর্ভের ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে যা ধীরে ধীরে জমাট বেঁধে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে। এর পর কালক্রমে প্রচণ্ড চাপ ও তাপের ফলে আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়)

নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য

  নদী উপত্যকা এবং হিমবাহ উপত্যকার মধ্যে পার্থক্য Sl. No. নদী উপত্যকা হিমবাহ উপত্যকা 1 মেরু প্রদেশের বরফাবৃত অঞ্চল এবং উষ্ণ ও শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে নদী উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কেবলমাত্র বরফে ঢাকা উঁচু পার্বত্য অঞ্চল এবং হিমশীতল মেরু অঞ্চলেই হিমবাহ উপত্যকার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। 2 পার্বত্য অঞ্চলে নদী উপত্যকা প্রধানত ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো হয়। হিমবাহ উপত্যকা ইংরেজি ‘U’ অক্ষরের মতো হয়। 3 পার্বত্য ও উচ্চ সমভূমি অঞ্চলে নদী স্রোতের গতিবেগ প্রবল হয়, নিম্নভূমিতে নদী স্রোতের গতি ধীরে ধীরে কমে আসে। বেশিরভাগ সময়েই হিমবাহ অত্যন্ত ধীরগতিতে প্রবাহিত হয়। 4 নদী উপত্যকা আঁকাবাঁকা পথে অগ্রসর হয়। হিমবাহ উপত্যকা সোজা পথে অগ্রসর হয়। 5 সাধারণত নদী উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য বেশি হয়। হিমবাহ উপত্যকার মোট দৈর্ঘ্য কম হয়। 6 নদীর সঞ্চয় কাজের ফলে নদী উপত্যকায় প্লাবনভূমি, স্বাভাবিক বাঁধ, বদ্বীপ প্রভৃতি ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়। ...