বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ভারত-ইতিহাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য এক মহাদেশের সারাংশ (Epitome of the World) ভারতবর্ষ শুধুমাত্র একটি দেশ নয়, এটি একটি উপ-মহাদেশের সমতুল্য। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য, নৃতাত্ত্বিক ভিন্নতা এবং সাংস্কৃতিক বিপুলতা সত্ত্বেও এই ভূখণ্ডের হাজার বছরের ইতিহাসে যে "অন্তর্নিহিত মৌলিক ঐক্য" ( Fundamental Unity ) বারবার প্রকাশিত হয়েছে, তা বিশ্ব ইতিহাসে বিরল। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে যথার্থই " India offers unity in diversity " বা "বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য" বলে আখ্যা দিয়েছেন। যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষাভাষী মানুষের মিলনকেন্দ্র হওয়ায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষকে "মহামানবের সাগরতীর" নামে অভিহিত করেছেন। ভারতবর্ষের বৈচিত্র্যের স্বরূপ (The Nature of Diversity) ভারতের বৈচিত্র্যকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়: ক) প্রাকৃতিক বা ভৌগোলিক বৈচিত্র্য: ভূ-প্রকৃতি: উত্...
জোয়ারভাটা
প্রধানত চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষজনিত আকর্ষণ শক্তি এবং পৃথিবীর আবর্তনজনিত বিকর্ষণ শক্তির প্রভাবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে, নিয়মিতভাবে সাগর-মহাসাগরের জলরাশি পর্যায়ক্রমে স্ফীত ও অবনমিত হয়। বিপুল জলরাশির স্ফীতিকে জোয়ার এবং অবনমনকে ভাটা বলে। চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে সংঘটিত জোয়ারকে যথাক্রমে চান্দ্র জোয়ার ও সৌর জোয়ার বলে।
জোয়ারভাটা সৃষ্টিতে সূর্য অপেক্ষা চাঁদের ভূমিকাই বেশি। চাঁদ বা সূর্যের নিকটবর্তীস্থানে প্রত্যক্ষ আকর্ষণ বলের প্রভাবে যে জোয়ার ঘটে তাকে মুখ্য জোয়ার এবং মুখ্য জোয়ারের প্রতিপাদস্থানে আবর্তন জনিত কেন্দ্রবিমুখ বলের প্রভাবে যে জোয়ার ঘটে তাকে গৌণ জোয়ার বলে। একই স্থানে প্রতিদিন দুবার জোয়ার ও দুবার ভাটা হয়। জোয়ারভাটা প্রতিদিন সমান প্রবল হয় না। পূর্ণিমা অপেক্ষা অমাবস্যার জোয়ার বেশি প্রবল হয়। জোয়ারের সময় নদীর গভীরতা বাড়ে আবার জোয়ারের ফলে পলি জমে নদী অগভীরও হতে পারে। জোয়ারের জল নদীর জলকে লবণাক্ত করে, ফলে জলসেচ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জোয়ারের লবণাক্ত জল বন্দরগুলিকে বরফমুক্ত করে এবং বর্তমানে জোয়ারভাটার শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
জোয়ারভাটা সৃষ্টির কারণ—
(১) চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণ এবং
(২) পৃথিবীর আবর্তনের ফলে উৎপন্ন বিকর্ষণী শক্তি হল ভূপৃষ্ঠে জোয়ারভাটা সৃষ্টির মূল কারণ। সূর্যের তুলনায় চাঁদ পৃথিবীর কাছে আছে বলে জোয়ারভাটা সৃষ্টির ক্ষেত্রে সূর্যের আকর্ষণের তুলনায় চাঁদের আকর্ষণই বেশি কার্যকরী হয়,
যেমন—
(ক) সূর্যের ভর চাঁদের ভরের তুলনায় ২ কোটি ৬০ লক্ষ গুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সূর্য চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩৮০ গুণ দুরে অবস্থিত। এইজন্য পৃথিবীর জলভাগের ওপর চাঁদের আকর্ষণী ক্ষমতা সূর্যের প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় সূর্যের চেয়ে প্রধানত চাঁদের আকর্ষণেই জোয়ারভাটা হয়।
(খ) চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তির প্রভাবে কঠিন পদার্থের তুলনায় পৃথিবীর তরল জলরাশি খুব সহজে প্রভাবিত হয়ে জোয়ারের সৃষ্টি করে।
(গ) পৃথিবীর জলরাশির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট হওয়ায়, চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণ প্রভাবিত স্থানের দিকে পৃথিবীর জলরাশি চলে যাওয়ায় কম আকর্ষণযুক্ত স্থানে ভাটার সৃষ্টি হয়।
Comments
Post a Comment