নদীর উচ্চপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের ফলে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তার বর্ণনা দাও। অথবা, একটি আদর্শ নদীর বিভিন্ন ক্ষয়কাজের ফলে গঠিত তিনটি ভূমিরূপের চিত্রসহ সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও। অথবা, নদীপ্রবাহের যে-কোনও একটি অংশে নদীর কার্যের বিবরণ দাও। উচ্চপ্রবাহ বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর প্রধান কাজ হল ক্ষয় করা। এর সঙ্গে বহন ও অতি সামান্য পরিমান সঞ্চয়কার্য ও করে থাকে। পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে এই অংশে নদীপথের ঢাল খুব বেশি হয়, ফলে নদীর স্রোতও খুব বেশি হয়। স্বভাবতই পার্বত্য অঞ্চলে নদী তার প্রবল জলস্রোতের সাহায্যে কঠিন পাথর বা শিলাখণ্ডকে ক্ষয় করে এবং ক্ষয়জাত পদার্থ ও প্রস্তরখণ্ডকে সবেগে বহনও করে। উচ্চ প্রবাহে নদীর এই ক্ষয়কার্য প্রধানত চারটি প্রক্রিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া গুলি হলো - অবঘর্ষ ক্ষয়, ঘর্ষণ ক্ষয়, জলপ্রবাহ ক্ষয় ও দ্রবণ ক্ষয়। নদীর ক্ষয়কাজের ফলে বিভিন্ন ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, যেমন: (১) ইংরেজি "।" এবং "V" অক্ষরের মতো নদী উপত্যকা: পার্বত্য গতিপথের প্রথম অবস্থায় প্রবল বেগে নদী তার গতিপথের ...
পরিচলন বৃষ্টিপাত
উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু পরিচলন প্রক্রিয়ায় ঊর্ধ্বগামী হলে বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঠান্ডা ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘ ও পরে বৃষ্টিরূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে ঝরে পড়ে, এই রকম বৃষ্টিপাতকেই পরিচলন বৃষ্টি বলে।
পরিচলন বৃষ্টিপাতের কারণ—
(১) নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ৫°—১০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সূর্য প্রায় সারা বছর ধরে লম্বভাবে প্রখর কিরণ দেয়।
(২) এই অঞ্চলের স্থলভাগের তুলনায় জলভাগ বেশি বলে দিনের বেলা প্রখর সূর্যকিরণের উত্তাপে এই অঞ্চলের জল বাষ্পীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পরূপে বাতাসের সঙ্গে মিশে থাকে।
(৩) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ শান্তবলয়ের বায়ু প্রধানত ঊর্ধ্বগামী বলে এই অঞ্চলের উষ্ণ ও হালকা বায়ু দ্রুত উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে প্রথমে মেঘের সৃষ্টি করে এবং পরে ছোটো-বড়ো জলকণায় পরিণত হয়।
(৪) বড়ো জলকণারা আশপাশের ছোটো জলকণাগুলিকে গ্রাস করে নিয়ে ক্রমশ এত বড়ো হয় যে তারা আর আকাশে ভেসে বেড়াতে না পেরে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে পরিচলন বৃষ্টিপাত রূপে নীচে নেমে আসে।
পরিচলন বৃষ্টিপাতের জন্য বায়ুমণ্ডলে যথেষ্ট উষ্ণতা এবং এই উষ্ণতার সাহায্যে বাষ্পীভূত হওয়ার জন্য প্রচুর জলভাগের প্রয়োজন। যে সকল অঞ্চলে জলভাগ বেশি সেখানে দিনেরবেলায় প্রচণ্ড তাপে প্রচুর জলীয়বাষ্পের সৃষ্টি হয়। জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু হালকা হওয়ায় ঊর্ধ্বগামী হয়। উপরের স্তরের শীতল বায়ুর সংস্পর্শে আর্দ্র বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়। ঘনীভূত মেঘ থেকে বৃষ্টিপাত ঘটে। এইভাবে পরিচলন প্রক্রিয়ায় শীতল ও শুষ্ক বায়ু অধঃগামী হয় এবং উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু ঊর্ধ্বগামী হলে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটে।
পরিচলন বৃষ্টিপাত হওয়ার প্রধান এই শর্ত গুলিই পৃথিবীর নিরক্ষীয় অঞ্চলে ভালোভাবে পূরণ হওয়ায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে পরিচলন বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বেশি হয়।
নিরক্ষীয় অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলে সারা বছর ধরেই জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এই অঞ্চলে সারা বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়। বিকাল ৪ টে-র কাছাকাছি সময়ে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টি নামে বলে, একে 4’o clock Rain-ও বলে। প্রধানত বিকেলের দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত হল পরিচলন বৃষ্টিপাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
এছাড়া নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে গ্রীষ্মকালের শুরুতে এবং ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত শরৎকালে পরিচলন বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।
Comments
Post a Comment