ইতিহাসের উপাদান বলতে কী বোঝো? ইতিহাসের উপাদানগুলির শ্রেণিবিভাগ করো। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস রচনায় মুদ্রার গুরুত্ব বিস্তারিত আলোচনা করো। ১. ইতিহাসের উপাদান ইতিহাস হলো মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারাবাহিক বিবরণ। কিন্তু এই বিবরণ কল্পনাপ্রসূত নয়; এটি নির্ভর করে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও প্রমাণের ওপর। যে সমস্ত উৎস, সাক্ষ্য বা প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিকরা অতীত দিনের ঘটনাবলী পুনর্গঠন করেন, তাকেই 'ইতিহাসের উপাদান' (Sources of History) বলা হয়। উপাদান ছাড়া ইতিহাস রচনা করা অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার শামিল। ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বা আর. সি. মজুমদার সকলেই একমত যে, প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের ক্ষেত্রে উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম। ২. ইতিহাসের উপাদানের শ্রেণিবিভাগ (Classification of Historical Sources) ইতিহাসের উপাদানগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়— (ক) সাহিত্যিক উপাদান এবং (খ) প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান। তবে আধুনিক যুগে এর সাথে আরও কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। নিচে এর বিস্তারিত দেওয়া হলো: ক) সাহিত্যিক উপাদান (Literary Sources):...
মৌসুমি স্রোত
ভারত মহাসাগরের উত্তর অংশের স্রোত প্রধানত মৌসুমি বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় বলে এই অংশের সমুদ্রস্রোতকে মৌসুমি স্রোত বলা হয়। গ্রীষ্মকাল ও শীতকালে যথাক্রমে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হওয়ায় ওই অংশের সমুদ্রস্রোতগুলি ঋতুভেদে দিক পরিবর্তন করে। প্রবাহের দিক অনুসারে মৌসুমি স্রোত তাই দুই প্রকার— দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত ও উত্তর-পূর্ব মৌসুমি স্রোত। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরবসাগর থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে প্রবাহিত স্রোতকে বলা হয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি স্রোত। এই স্রোত পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে সুমাত্রা দ্বীপের পাশ দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে জাপান স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। আবার, শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে আরবসাগরের দিকে প্রবাহিত স্রোত উত্তর-পূর্ব মৌসুমি স্রোত নামে পরিচিত। এই স্রোত দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় হয়।
শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ আলাদা দিক থেকে প্রবাহিত মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারত মহাসাগরের সমুদ্র স্রোতের ওপরও পড়ে।
অর্থাৎ শীত ও গ্রীষ্মে বিপরীতধর্মী মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারত মহাসাগরে
(ক) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোত ও
(খ) শীতকালীন মৌসুমি স্রোতের সৃষ্টি হয়।
(ক) গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোত—
(১) গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা সোমালি স্রোত নামে আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব উপকূল ধরে আরব সাগরে প্রবেশ করে।
(২) আরব সাগর থেকে এই স্রোত ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ দিক দিয়ে ভারত মহাসাগরের দিকে প্রবাহিত হয়।
(৩) ভারত মহাসাগর থেকে এই স্রোতটি ভারতের পূর্ব উপকূল ধরে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার স্থলভাগে বাধা পেয়ে দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে আন্দামান সাগরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।
(৪) আন্দামান সাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত দক্ষিণমুখী এই স্রোতটি সুমাত্রা দ্বীপের পশ্চিম উপকূল ধরে প্রবাহিত হয়ে হওয়ার পর আয়ন বায়ুর প্রভাবে পশ্চিমমুখী হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
(খ) শীতকালীন মৌসুমি স্রোত—
শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালীন মৌসুমি স্রোতটি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোতের সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে—অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়, যেমন–
(১) ভারত মহাসাগরের শীতকালীন মৌসুমি স্রোতটি মালয়েশিয়া ও সুমাত্রার মধ্যভাগ থেকে উৎপন্ন হয়ে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোতের বিপরীত পথ ধরে আন্দামান সাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়।
(২) আন্দামান সাগর অতিক্রম করে এই স্রোতটি বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে এবং
(৩) সেখান থেকে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমি স্রোতের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়ে আফ্রিকার সোমালি ল্যান্ড-এর দক্ষিণ প্রান্তের দিকে প্রবাহিত হয় এবং
(৪) নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোতের সঙ্গে মিশে যায়।
Comments
Post a Comment