প্রাচীন ভারত ও ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট (Ancient India and Geographical Context) ভারতবর্ষ' নামকরণ: আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি 'ভারতবর্ষ'-বিশ্বের অন্যতম প্রাচীনতম দেশ। ডঃ রামশরণ শর্মা-র মতে, 'ভারত'-নামক এক প্রাচীন উপজাতির নামানুসারে আমাদের দেশের নাম হয় 'ভারতবর্ষ'। ভারবর্ষকে 'ইন্ডিয়া'ও বলা হয়ে থাকে। সম্ভবত 'সিন্ধু' শব্দ থেকে 'হিন্দু'র শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে; আর গ্রিক ও রোমানদের 'হিন্দু' উচ্চারণ হত 'ইন্ডুস্' বা Indus থেকে। এই প্রাচীন Indus থেকেই বর্তমান India শব্দটির উৎপত্তি। আর, এ-থেকেই গ্রিস লেখক মেগাস্থিনিস-এর বিখ্যাত গ্রন্থটির নাম হয়েছে 'ইন্ডিকা'। ভারতবর্ষের মোট আয়তন ৩২,৮০,৪৮৩ বর্গকিলোমিটার। উত্তর-দক্ষিণে ৩,২০০ কিলোমিটার লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩,০০০ কিলোমিটার চওড়া। ভারতবর্ষের উত্তরদিকে চিন, নেপাল ও ভুটান; উত্তর-পশ্চিম দিকে পাকিস্তান; পশ্চিমদিকে আরব সাগর; দক্ষিণদিকে ভারত মহাসাগর এবং পূর্ব দিকে ব্রহ্মদেশ, বাংলাদেশ ও বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এ ছাড়া আরবসাগরে অবস্থিত লাক্ষা, মিনিকয়; বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ...
ঘূর্ণবাত
ঘূর্ণবাত আবহাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন করে। ঘূর্ণবাতের তাণ্ডবে জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং সম্পদ ও সম্পত্তির বিপুল ক্ষয় ক্ষতি হয়। তাই আবহবিজ্ঞানে ঘূর্ণবাতকে এক বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বায়ুমন্ডলে উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্যের ফলেই এর উৎপত্তি ঘটে।
কোনো অল্পপরিসর স্থান যদি হঠাৎ বেশি মাত্রায় উত্তপ্ত হয় তবে সেই স্থানে তখন নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ার ফলে চারিদিকের অপেক্ষাকৃত শীতল ও উচ্চচাপের স্থানগুলো থেকে বায়ু প্রচণ্ড বেগে ওই নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে এবং ঘুরতে ঘুরতে ওই নিম্নচাপের কেন্দ্রে প্রবেশ করে, একেই ঘূর্ণবাত [Cyclone] বলে।
বঙ্গোপসাগর, আরবসাগর ও ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোন নামে পরিচিত। এই ঝড়ের প্রভাবে ভারত, বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বছরে দু-বার অর্থাৎ মে-জুন এবং অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এই ঝড়ের সৃষ্টি হয়। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে সমুদ্রের ওপর শক্তিশালী নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হলে সাইক্লোন ঝড়ের উৎপত্তি হয়। এর প্রভাবে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। সাইক্লোনের প্রভাবে উপকূল অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাস ঘটে এবং ব্যাপক সম্পত্তি ও জীবনহানি ঘটে। আরবসাগর অপেক্ষা বঙ্গোপসাগরের উপর বেশি সংখ্যায় ঘূর্ণবাত বা সাইক্লোন সৃষ্টি হয়। ভারতে—পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও অন্ধ্রপ্রদেশ ব্যাপকভাবে সাইক্লোনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য—
ঘূর্ণবাতের বায়ু প্রবাহ একটি নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে ঘোরে, যেমন–
(১) উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে অর্থাৎ বামাবর্তে এবং
(২) দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ দক্ষিণাবর্তে ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়।
(৩) ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে নিম্নচাপ অবস্থান করে।
(৪) বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্র অভিমুখী হয়।
(৫) নিম্নচাপ কেন্দ্রের বাতাস উষ্ণ ও ঊর্ধ্বগামী হয়।
(৬) ঘূর্ণবাত স্বল্প স্থায়ী, কিন্তু শক্তিশালী।
(৭) ঘূর্ণবাত প্রবাহের পথে প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়।
(৮) ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে অত্যন্ত গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্র; ক্রান্তীয় অঞ্চলের এই নিম্নচাপ কেন্দ্র ‘ঘূর্ণবাতের চক্ষু’ বা ‘ঝড়ের চক্ষু’ [Eye of the Cyclone or Eye of the Storm] নামে পরিচিত।
(৯) ঘূর্ণবাত হল ঘূর্ণঝড়; এই ঝড় কখন সোজা বা সরল পথে ধাবিত হয় না; এই ঝড় সব সময়ে ঘুরপাক খেয়ে কুণ্ডলাকারে প্রবাহিত হয়।
(১০) সূর্যের আপাতগতিপথে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণবাতের গতিপথ কিছু উত্তরে ও দক্ষিণে সরে যায়।
ক্রান্তীয় অঞ্চল ও উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে নিম্নচাপ কেন্দ্রিক, কেন্দ্রমুখী, ঘূর্ণন গতিযুক্ত, প্রবল বায়ুপ্রবাহ হল ঘূর্ণবাত। চীন সাগরের ঘূর্ণবাত “টাইফুন”, পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের ঘূর্ণবাত “হ্যারিকেন”, ভারত ও বাংলাদেশের ঘূর্ণবাত “আশ্বিনের ঝড়” বলে পরিচিত। উভয় গোলার্ধের ক্রান্তীয় অঞ্চলে ৬°–২০° অক্ষাংশের মধ্যে এবং নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে ৩৫°–৬৫° অক্ষাংশের মধ্যে সাধারণত ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়।
উৎস স্থান, উৎপত্তি ও গঠন অনুসারে ঘূর্ণবাতকে —
(i) ক্রান্তীয় অঞ্চলের প্রবল ঘূর্ণবাত এবং
(ii) উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত মৃদু ঘূর্ণবাত— এই দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
Comments
Post a Comment